চাটমোহরে অনুমোদন ছাড়া ফসলি জমিতে পুকুর খননের হিড়িক
নিজস্ব প্রতিবেদক, চাটমোহর : পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলী জমিতে অনুমোদন ছাড়া অবৈধভাবে পুকুর খনন করা হচ্ছে। দিনে এবং রাতে এস্কেভেটর (ভেকু মেশিন) দিয়ে পুকুর খনন করে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে এলাকার কয়েকটি ইটের ভাটায়। কেটে নেওয়া হচ্ছে নদীর মাটিও। ট্রাক ও ট্রলিযোগে কর্তনকৃত মাটি পরিবহন করায় ভেঙে যাচ্ছে রাস্তা। ধুলোবালিতে দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ।
সরেজমিনে চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের চিনাভাতকুর মৌজার কুজোর মোড় থেকে বিন্যাবাড়ি অভিমুখী সড়কের দক্ষিণ পাশে গেলে দেখা যায় এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে মাঠের ফসলি জমি কেটে পুকুর খনন করা হচ্ছে। এ স্পটে অনুমোদন ছাড়াই মেশিন দিয়ে মাটি কাটার কাজ চলছে গত তিনদিন যাবত। কয়েকটি মিনি ট্রাক যোগে মাটি যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী ইটের ভাটায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আজমত আলী নামক একজন মাটি ব্যবসায়ী মাটি কেটে বিক্রি করছেন। এ ব্যাপারে আজমত আলী জানান, মাটি কাটার অনুমোদন নেই তার। তারপরও কিভাবে মাটি কাটছেন জানতে চাইলে সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
হান্ডিয়াল ইউনিয়নের বেলঘরিয়া, সিদ্দিনগর সহ কয়েকটি পয়েন্টে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করে মাটি বিক্রি করছেন রিপন নামের এক ব্যক্তি।
এছাড়া একই উপজেলার বোয়াইলমারী, সোনাহার পাড়াসহ বিভিন্ন মাঠ থেকে মাটি ব্যবসায়ীরা মাটি কেটে বিক্রি করছে। শনিবার বিকেলে চিরইল বিলে পুকুর খনন শুরু করেন বেসরকারি সংস্থা পিসিডির পরিচালক শফিকুল ইসলাম। এলাকার কৃষকরা অভিযোগ করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাৎক্ষনিক বন্ধ করে দেন।
এসব এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে প্রশাসনের নাকের ডগায় ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব চললেও নেয়া হচ্ছে না কোনো ব্যবস্থা। অভিযোগ, মাটি ব্যবসায়ীরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এই অবৈধ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কয়েকজন জানান, বিষয়টি চাটমোহরের ইউএনওকে জানানোর ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন না।
স্থানীয়রা বাসিন্দারা জানান, ফসলি জমির মালিকরা স্থানীয় মাটি ব্যবসায়ীদের সাথে চুক্তি করে মাটি বিক্রি করছে। মাটি বহনকারী বিভিন্ন যানবাহনের দাপটে রাস্তাগুলোর ক্ষতি হচ্ছে। পাশিপাশি মাটি বহন করার সময় ধুলাবালিতে পথ চলাচলকারী সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সূত্র মতে, প্রতি টলি মাটি বিক্রি হচ্ছে ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকায়। প্রতি মিনি ট্রাক ভর্তি মাটি বিক্রি হচ্ছে প্রায় ২ হাজার টাকায়। মাটি বহন করার সময় আশপাশের জমির ফসলও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জানানোর পর কেউ কেউ পুকুর খনন বন্ধ করে দেন। কিছুদিন পরে আবার শুরু করেন। এভাবেই চলছে ফসলি জমিতে পুকুর খনন আর মাটি বিক্রির উৎসব।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ মহলের মুঠোফোনে দু’টি নাম্বার থেকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে, চাটমোহর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) তানজিনা খাতুন বলেন, ফসলী জমিতে পুকুর খননের খবর পেলেই আমরা তা বন্ধ করে দেই। আইনানুগ ব্যবস্থা নেই। খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, অনুমোদন ছাড়া ফসলী জমিতে পুকুর খনন বা মাটি বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। যারা করছে তারা অনুমোদন না নিয়ে গোপনে করে থাকতে পারে। প্রশাসনের তরফ থেকে যেখানেই অভিযোগ আসছে সেখানেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সবাইকে সচেতন হওয়ার আহবান জানান তিনি।