বাংলাদেশ কনস্যুলেটে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক সেমিনারে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের টেম্পরারী সমস্যা কখনোই দীর্ঘস্থায়ী হবে না

বাংলাদেশ কনস্যুলেটে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক সেমিনারে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের টেম্পরারী সমস্যা কখনোই দীর্ঘস্থায়ী হবে না

নিউইয়র্ক (ইউএনএ) : যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সবদিক দিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। তিনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বহুমাত্রিকতা ও গভীরতা উল্লেখপূর্বক বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণে সকলকে নিয়ে কাজ করার আশাবাদ পূনঃব্যক্ত করে রাষ্ট্রদূত আরো বলেছেন, দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দুই দেশের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক বিরাজ করছে, ভালো বুঝাপড়া রয়েছে, ষ্টেট ডিপার্টমেন্টের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে টেমপরারী (সাময়িক) কোন সমস্যা কখনোই দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের কোন অবনতি নেই। তবে অবশ্যই আমরা আমাদের বন্ধুদের (যুক্তরাষ্ট্র) কাছ থেকে সাজেশন (পরামর্শ) নিচ্ছি। এবং সেই সাজেশন যদি আমাদের নিয়মকানুনের মধ্যে হয় আমরা সেগুলো গ্রহণ করছি। আমরা যেকোন ক্ষেত্রে আমাদের বন্ধুদের পরামর্শ চাই। খবর ইউএনএ’র।

নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে বুধবার সন্ধ্যায় (৭ জুন) ‘বাংলাদেশ : এ ল্যান্ড অব অপরচ্যুনিটিস’ শীর্ষক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক এক সেমিনারে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান উপরোক্ত কথা বলেন। উক্ত সেমিনারে তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ইকোনমিক মিনিস্টার মোঃ মেহেদী হাসান। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সোনালী এক্সচেঞ্জ ইনক’র প্রেসিডেন্ট ও সিইও দেবশ্রী মিত্র। জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের ইকোনমিক মিনিস্টার মোঃ মাহমুদুল হাসানসহ সরকারি-বেসরকারি এক্সচেঞ্জ হাউসের প্রতিনিধি, বিদেশী ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক, সামাজিক, ব্যবসায়িক, সংস্কৃতি ও মিডিয়া অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।

সেমিনার অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কনসাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম। এরপর বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডের উপর একটি ডকুমেন্টারী প্রদর্শিত হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাংবাদিক ও সুধীবৃন্দের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। এই পর্বে টাইম টেলিভিশন-এর সিইও এবং সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক আবু তাহের, সাপ্তাহিক প্রথম আলো’র সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী, সাংবাদিক মনোয়ারুল ইসলাম, শামীম আহমেদ, সাখাওয়াত হোসেন সেলিম, শাহ ফারুক ছাড়াও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাসুদুল হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা খান মিরাজ, সেন্টার ফর এনআরবি’র চেয়ারপার্সন এম এস সেকিল চৌধুরী, রাজনীতিক সাখাওয়াত বিশ্বাস, ইউএসবিসিআই’র প্রেসিডেন্ট লিটন আহমেদ প্রমুখ অংশ নেন।
কনস্যুলেটের ফাস্ট সেক্রেটারী ইশরাত জাহানের সঞ্চালনায় সেমিনারের প্রশ্নত্তোর পর্বে সাংবাদিকগণ বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন ও নতুন ভিসা নীতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে কোন প্রভাব পড়বে কিনা, দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে হয়রানী বন্ধে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ চালু, অপরদিকে বিশিষ্টজন দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নানান বাধাবিপত্তি, অর্থ আদান-প্রদানে সমস্যা প্রভৃতি বিষয়ে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এদিকে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান বাণিজ্য-বিনিয়োগসহ বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বহুমাত্রিকতা ও গভীরতা উল্লেখপূর্বক বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণে সকলকে নিয়ে কাজ করাার আশাবাদ পূনঃব্যক্ত করেন। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির ব্যাপারে সকলকে উৎসাহিত করেন। তিনি বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সহজ লভ্য ও দক্ষ শ্রমশক্তি, কৌশলগত অবস্থান, ক্রমবর্ধমান আভ্যন্তরীন বাজার, সরকার ঘোষিত সুযোগ-সুবিধা ও প্রণোদনার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশকে শিল্পকারখানা স্থাপন ও বিদেশী বিনিয়োগের আদর্শ স্থান হিসেবে মন্তব্য করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার ব্যবসায়ীসহ প্রবাসীদের বাংলাদেশে আরো বেশী মাত্রায় বিনিয়োগের আহবান জানান। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রেমিট্যান্সের গুরুত্ব বর্ণনা করে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি করার ব্যাপারে একচেঞ্জ হাউসগুলোকে পদক্ষেপ গ্রহনের আহবান জানান। তিনি সরকার প্রণীত পদক্ষেপসমূহ ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে জনসচেতনা সৃষ্টিতে এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর সহযোগিতা কামনা করেন। বর্তমান বিশ্ববাস্তবতায় সব দেশের ন্যায় বাংলাদেশও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে তা তুলে ধরেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে যে আজ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তা অব্যাহতভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান। রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান প্রবাসীদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতকরণে তাঁর প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রবাসীদের সেবার মান সমুন্নত রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন। পরে তিনি সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। সেমিনারে উপস্থিত বিদেশী অংশগ্রহনকারীগণ বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বাংলাদেশ দূতাবাসের ইকোনমিক মিনিস্টার মোঃ মেহেদী হাসান বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার বিরাজমান অর্থনৈতিক সম্পর্কের উপর আলোকপাত করেন। তিনি বিনিয়োগের ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করেন, যার মধ্যে রয়েছে তৈরী পোষাক ছাড়াও কৃষিপণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, ঔষধ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি, অটোমোবাইল, সুনীল অর্থনীতি, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, নবায়নযোগ্য জ্বালানী ও পর্যটন খাত। প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিনিয়োগে নিরাপত্তা নিশ্চিত কল্পে সরকার ঘোষিত বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে তিনি প্রবাসী বাংলাদেশীদের বেশী বেশী করে বিনিয়োগের আহবান জানান।

সেমিনারে সোনালী এক্সচেঞ্জের সিইও দেবশ্রী মিত্র তাঁর বক্তব্যে প্রচলিত বিনিয়োগের পাশাপাশি স্টক ও বন্ডে বিনিয়োগের সুবিধাসমূহের উপর প্রবাসীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে সরকারী প্রণোদনার সুবিধা গ্রহনপূর্বক তিনি সকলকে বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রেরণের আহবান জানান।

কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম তাঁর সূচনা বক্তব্যে বাংলাদেশকে অপার সম্ভাবনার দেশ হিসেবে উল্লেখ করে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ ও নিয়ামকসমূহের বর্ণনা করেন। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য বিবৃত করে ২০৪১ রূপকল্প অর্জন ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বাস্তবায়নে সকলকে আরো কার্যকরী ও অর্থবহ অবদান রাখার জন্য আবেদন জানান। তিনি বাণিজ্য-বিনিয়োগ ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিতে কনস্যুলেট গৃহিত সাম্প্রতিক পদক্ষেপসমূহ, বিভিন্ন সময়ে আয়োজিত সেমিনার ও সভার কথা উল্লেখ করে কনস্যুলেটের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পূনঃব্যক্ত করেন। সেমিনারে অংশগ্রহনকারী সকলে অনুষ্ঠানটি আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস এবং বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।