কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পেরে এসিড পানের আড়াই মাস পর মারা গেলেন গৃহবধু রোজিনা
নিজস্ব প্রতিনিধি : কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পেরে এডিস পানের আড়াই মাস পর মারা গেলেন গৃহবধু রোজিনা খাতুন। অভিযোগ রয়েছে, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘পাবনা প্রতিশ্রুতি’ নামে এক এনজিওর শাখা ব্যবস্থাপক ও কর্মিরা তাকে অপমান অপদস্ত করেন। এই দূব্যবহার সইতে না পেরে তিনি এডিস পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
মৃত রোজিনা খাতুন পাবনা সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়নের আরিফপুর মহল্লার ট্রাক ড্রাইভার আমজাদ হোসেনের স্ত্রী। মঙ্গলবার রাত ১১ টার দিকে তিনি নিজ বাড়ীতে মারা যান। বুধবার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
পারিবারিক ভাবে জানা যায়, ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে রোজিনা খাতুন পাবনা প্রতিশ্রুতি এনজিও দোগাছি শাখা থেকে ৪৫ হাজার টাকা ঋণ নেন। নানা অভাব অনটনের মধ্যেও তিনি নিয়মিত ভাবে ১৩০০ টাকা হারে ২৩ কিস্তি পরিশোধ করেন। পরবর্তী কিস্তির টাকা যথা সময়ে দিতে না পেরে কিছুদিন বাড়ির বাইরে অন্যত্র অবস্থান করেন। গত ১১ জানুয়ারি তিনি নিজ বাড়িতে ফিরলে এনজিও মাঠ কর্মি শাহিদা খাতুন লোকজন নিয়ে তার বাড়িতে যান। এনজিও কর্মির নিকট রোজিনা খাতুন কিস্তির টাকা কিছুটা কমিয়ে দিতে অনুরোধ করেন। এতে রাজি না হয়ে উল্টো রোজিনা খাতুনকে অফিসে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। দোগাছি শাখার ব্যবস্থাপন এহিয়া খানের কাছেও একই দাবী জানান রোজিনা। কিন্তু তার দাবী না মেনে উল্টো অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। রাগে ক্ষোভে বাড়ি ফিরে রোজিনা খাতুন এসিড পান করেন আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে। বাড়ির লোকজন টের পেয়ে তাকে দ্রুত পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় রোজিনা খাতুনকে ১৮ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
এদিকে নিহতের ছেলে হৃদয় গত ১৫ জানুয়ারি বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় ৫ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পুলিশ ২ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, পাবনা প্রতিশ্রুতির শাখা ব্যবস্থাপক এহিয়া খান ও মাঠ কর্মি শাহিদা খাতুন।
এ বিষয়ে পাবনা প্রতিশ্রুতির নির্বাহী পরিচালক মমতা চাকলাদার বলেন, কিস্তির টাকা দিতে না পারা, অপমান অপদস্ত করার বিষয়টি সঠিক নয়। তাদের পারিবারিক বিরোধেই তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। মমতা চাকলাদার বলেন, তারপরও মানবিক দিক ভেবে আমাদের পক্ষ থেকে তার চিকিৎসা সহায়তার কমতি করা হয়নি।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, শতকোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া এই এনজিও কর্তৃপক্ষ এ ঘটনাটি রফা ও ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা শুরু থেকেই চালিয়ে আসছেন। ইতোমধ্যে তারা একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে তাদের পক্ষের অবস্থান জানান দিলেও বিষয়টি পরিস্কার হয়ে আসছে বলে দাবী সূত্রটির।
টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা ও ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে এমন বিষয়ে জানতে চাইলে মমতা চাকলাদার বিষয়টি হেসে উড়িয়ে দেন। তিনি কোন সদ্যুত্তর দেননি।
এদিকে এনজিওর গ্রাহক এসিড পানে আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মকর্তা ও কর্মিকে বদলি করে অন্য শাখায় স্থানান্তর করা হয়। দোগাছি শাখার নতুন ব্যবস্থাপক আব্বাস উদ্দিন বলেন, পারিবারিক কলহের কারণে এসিড পান করেছিলেন রোজিনা খাতুন। এখানে এনজিওর কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে তিনি দাবী করেন।
নিহতের স্বামী আমজাদ হোসেন ও সন্ত্রান হৃদয় হোসেন বলেন, আমরা মামলা করেছিলাম ৫ জনের নামে। পুলিশ ২ জনকে ধরলেও কয়েকদিনের মধ্যে তারা জামিনে মুক্ত হয়ে যান। বাকিদের ধরা হয়নি। রোজিনা খাতুনের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী পিতাপুত্রের।
এ প্রসঙ্গে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, পূর্বের ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা মেলায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এ ঘটনার তদন্ত চলছে। আইনানুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।