ব্যবসায়ী ইসমাইল হত্যা ও হলুদবোঝাই ট্রাক ডাকাতির রহস্য উদঘাটন

ব্যবসায়ী ইসমাইল হত্যা ও হলুদবোঝাই ট্রাক ডাকাতির রহস্য উদঘাটন

নিজস্ব প্রতিনিধি : পাবনার চাটমোহর উপজেলায় চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন (২৯) হত্যা এবং ঈশ্বরদী উপজেলায় ৪৫ লাখ টাকা মুল্যের হলুদ বোঝাই ট্রাক ডাকাতি ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।

ইসমাইল হত্যার মুল আসামী রবিউল করিম (৩২) কে গ্রেপ্তার ও হত্যায় ব্যবহৃত মালামাল জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া হলুদ বোঝাই ট্রাক ডাকাতির ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার এবং ডাকাতি হওয়া হলুদ ও ট্রাক উদ্ধার করা হয়েছে।

সোমবার (০৬ মার্চ) দুপুরে পাবনার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী বলেন, চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের তেবাড়িয়া গ্রামের ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী মাহমুদা খাতুন ওরফে মতেজার সাথে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে একই ইউনিয়নের ধুলাউড়ি কুঠিপাড়া গ্রামের রবিউল করিমের। এদিকে ইসমাইলের আবার সোনার মূর্তি ব্যবসার প্রতি লোভ ছিল।

নিজের পথের কাটা সরাতে তাই ইসমাইলকে সোনার মূর্তি ব্যবসার মিথ্যা প্রলোভন দেন রবিউল। নিজের কাছে একটি সোনার মূর্তি আছে বলেও জানান তিনি। সেটি বিক্রি করে অনেক টাকার মালিক হতে পারবে এমন আশায় ইসমাইল সোনার মূর্তিটি দেখতে চায়। রবিউল তাকে জানায়, মূর্তিটি তার জমিতে পুঁতে রাখা আছে। রাতে গিয়ে আনতে হবে।

এই কৌশলে গত ২২ ফেব্রুয়ারী রাতে সোনার মূর্তি দেবার কথা বলে একটি বাইসাইকেলে চড়িয়ে ইসমাইলকে ডেকে নিয়ে যায় রবিউল। এরপর ধূলাউড়ি নলগাড়ী বিলের মধ্যে ভুট্টার জমিতে ইসমাইলকে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে রবিউল। ২২ ফেব্রুয়ারী রাতে ইসমাইল বাড়ি না ফেরায় তার স্ত্রী ও স্বজনরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করে।

এর পাঁচদিন পর ২৭ ফেব্রুয়ারী সকালে ভুট্টার জমি থেকে ইসমাইলের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। খবর পেয়ে তার স্ত্রী ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি ইসমাইলের বলে সনাক্ত করেন। এ ঘটনায় চাটমোহর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

পরে পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত ৪ মার্চ ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি রিক্সা গ্যারেজ থেকে রবিউলকে গ্রেপ্তার করে। পরে তার দেয়া তথ্য মতে, হত্যায় ব্যবহৃত একটি গামছা, একটি বাইসাইকেল এবং ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ জব্দ জব্দ করা হয়। হত্যার ঘটনায় আসামী রবিউল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সোমবার তাকে আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন জানানো হলে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।

এদিকে একই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া থেকে ৪৫ লাখ টাকা মুল্যের হলুদ বোঝাই একটি ট্রাক ডাকাতির ঘটনারও ক্লু উদঘাটন করেছে পুলিশ। ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার ও ডাকাতি হওয়া হলুদসহ ট্রাকটি উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার মেলাগাছি গ্রামের হালিম মিয়া ওরফে চুকা ওরফে চিকু (৪০), টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার দেওড়া গ্রামের রিপন মিয়া (৩২) ও জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার চরশিশুয়া গ্রামের বেল্লাল ফকির (৩৫)।

পুলিশের দাবি, তারা আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য। তারা বাংলাদেশে স্থানীয় এজেন্ট দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে এবং অভিনব পন্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে ডাকাতির মাধ্যমে মালামাল লুট করে থাকে। তাদের বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ বিভিন্ন ধারায় একাধিক মামলা রয়েছে।

পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী জানান, চক্রটি নিজেদের র‌্যাব পরিচয় দিয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারী ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া এলাকায় একটি হলুদ চাতাল মিলের দুইজন নৈশপ্রহরী বেঁধে ২০৮ বস্তা হলুদ বোঝাই মিনি ট্রাক নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী রাজিব হোসেন ১৭ ফেব্রুয়ারী ঈশ্বরদী থানায় একটি মামলা করেন।

মামলার পর বিভিন্ন টাংগাইল, গাজীপুর, ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ এলাকায় হলুদের আড়তে অভিযানে যায় পুলিশের কয়েকটি দল। এরপর পুলিশ জানতে পারে লুন্ঠিত ২০৮ বস্তা হলুদের মধ্যে ২৫ বস্তা হলুদ গত ১৭ ফেব্রæয়ারী আশুলিয়া থানাধীন বাইপাইল এলাকায় একটি পাইকারি মুদি দোকানে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্যরা এক লক্ষ বাষট্টি হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। সেই সুত্র ধরে ১৯ ফেব্রুয়ারী মোবাইলে টাকা নিতে আসার কথা বলে বাইপাইল এলাকা থেকে প্রথমে রিপন ও বেল্লালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পরে তাদের দেয়া তথ্য মতে, বাইপাইলে উক্ত দোকান থেকে ২৫ বস্তা হলুদ (ওজন ১২৫০ কেজি) এবং টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানা এলাকা থেকে আরো ১৪৩ বস্তা হলুদ (ওজন ৭১৫০ কেজি) উদ্ধার করা হয়। এছাড়া আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ট্রাকের অবস্থান সনাক্ত করতে সক্ষম হয় পুলিশ। গত ২৩ ফেব্রুয়ারী গাজীপুরের বাসন থানাধীন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত ডাকাত সদস্য হালিম ওরফে চুকা ওরফে চিকু কে গ্রেপ্তার ও ট্রাকটি জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত তিন ডাকাত সদস্য আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বাকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে।
#