পাবনায় অপারেশনের পর নবজাতক উধাও রহস্য

পাবনায় অপারেশনের পর নবজাতক উধাও রহস্য

নিজস্ব প্রতিনিধি : পাবনা শহরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে এক প্রসুতি নারীর অপারেশনের পর নবজাতক নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, নবজাতক চুরি করে গায়েব করে দেয়া হয়েছে। তবে চিকিৎসকের দাবি, এটি ফ্যাগনম প্রেগনেন্সি অর্থাৎ ফলস্ প্রেগনেন্সি।

পাবনা শহরের শাপলা প্লাস্টিক মোড় এলাকায় মডেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গত শনিবার (১১ ফেব্রæয়ারি) রাতে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনায় সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দেবার পর তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

ভুক্তভোগী রোগী আকলিমা খাতুন আঁখি পাবনার বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানার মাসুমদিয়া ইউনিয়নের রতনগঞ্জ গ্রামের নজরুল ইসলাম গাছীর স্ত্রী।

রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য গত শুক্রবার (১০ ফেব্রæয়ারি) রোগীকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আল্ট্রাসনোগ্রাফি সহ সকল চিকিৎসক রিপোর্ট জমা দেয়া হয় হাসপাতালে। পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিশেষজ্ঞ সার্জন ডা. শাহীন ফেরদৌস শানুর তত্ত্বাবধানে রোগীর অপারেশন করা হয়। অ্যানেসথেসিয়া হিসেবে ডা. শানুর স্বামী আরিফুল ইসলাম ও সহকারী ডা. শরীফুল ইসলাম সহযোগিতা করেন।

কিন্তু সিজার করার পর চিকিৎসক রোগীর স্বজনদের জানান যে, রোগীর গর্ভে কোন বাচ্চা ছিল না। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালের রিপোর্ট রেখে সম্প্রতি করা রোগীর সকল রিপোর্ট গায়েব করে দেন।

রোগীর স্বামী নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, অপারেশনের সময় একবার বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শোনা গেছে। হয়তো বাচ্চাটি তাদের ভুল চিকিৎসায় মারা গেছে। নয়তোবা চুরি করে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। এক দেড় মাস আগেও ডা. শানু তাকে চেকআপ করেছিলেন।

২০১৭ সালে এই চিকিৎসকের তত্ত¡াবধায়নে তার স্ত্রীর সিজারিয়ান অপারেশনে একটি সন্তান ভূমিষ্ট হয় বলে জানান নজরুল ইসলাম।

এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক সেলিম উদ্দিন বলেন, সিজারের রোগী হিসেবেই ভর্তি করা হয়েছে তাকে। কিন্তু রোগীর কোন বাচ্চা ছিল না। অন্য কোনো সমস্যা ছিল। যেটা ডাক্তারটা অপারেশনের মাধ্যমে সমাধান করেছেন। কিন্তু এখন রোগীর স্বজনরা ‘বাচ্চা চুরি’র মিথ্যা অভিযোগ করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাইনী সার্জন ডা. শাহীন ফেরদৌস শানু বলেন, সিজারের রোগী হিসেবেই অপারেশন করতে গিয়ে দেখি তাদের ২০১৭ সালের কাগজপত্র রয়েছে। কিন্তু আমার আগের রোগী হওয়ায় এবং রোগীর অবস্থা বিবেচনায় অপারেশন করি। কিন্তু কোনো বাচ্চা পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, এটাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ফ্যাগনম প্রেগনেন্সি অর্থাৎ ফলস্ প্রেগনেন্সি বলা হয়। যেখানে একজন নারী তার গর্ভধারনের সকল অনুভূতি অনুধাবন করেন। পেট বড় হয়। সবকিছু গর্ভবতীর মতো। এটা এক ধরনের রোগ। দুর্ঘটনা বা চুরির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এটা বলা হচ্ছে।

ডা. শানু আরও বলেন, যে রোগীর বাচ্চা হতো না, ২০১৭ সালে আল্লাহর রহমতে আমার চিকিৎসায় তার গর্ভে সন্তান এসেছে। অথচ আজ সেই রোগী ও তার স্বজনরা আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করছে। বিষয়টি খুবই ব্রিবতকর।

এ বিষয়ে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, মৌখিক অভিযোগ পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। রোগীর স্বামী নজরুল ইসলাম সোমবার (১২ ফেব্রæয়ারি) একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। সকল কাগজপত্র যাচাই বাছাই ও তদন্ত করে দেখে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।