পড়ালেখার পাশাপাশি কৃষি কাজ করে সাবলম্বী পাবনার কলেজ ছাত্র রাকিব

পড়ালেখার পাশাপাশি কৃষি কাজ করে সাবলম্বী পাবনার কলেজ ছাত্র রাকিব

নিজস্ব প্রতিনিধি : অন্যবন্ধুরা যখন পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত, তখন পড়ালেখার পাশাপাশি কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাবলম্বী হয়েছে পাবনার কলেজ ছাত্র রাকিব হোসেন (২৩)। রাকিবের কৃষি খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে পাঁচ শতাধিক মানুষের।

রাকিবের কৃষি কাজের শুরু ২০১৮ সালের এইচ.এস.সি পরীক্ষার পর। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে অনলাইনে কাজের পাশাপাশি বাপ দাদার মত সীমিত পরিমাণে শখের বসে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো, বারোমাসি তরমুজ এবং পেপের বাগান দিয়ে শুরু করে।

প্রথমবার তরমুজে লস হলেও টমেটো ও পেপের বাগান দিয়ে সফলতার শুরু হয়। তারপর রমজান মাসকে টার্গেট করে পলিথিন মালচিং প্রযুক্তিতে শসা, পলিনেট হাউজ পদ্ধতিতে ক্যাপসিকাম ও শশা এছাড়া তরমুজ চাষ করে অনেক লাভবান হয় , এরপর আগাম ঝিংগা, ধুন্দল, ঢেড়শ, টমেটো এবং মৌসুমে পালংশাক চাষ করার মাধ্যমে সম্পূর্ণভাবে কৃষিতে জরিয়ে যায় রাকিব। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় রাকিব বাবার সোয়া ১ বিঘা জমি কৃষি কাজ নিয়ে শুরু করে। এখন ফসলের জমি লিজ নিয়ে কৃষিকাজ করা জমির পরিমান প্রায় ২৩ বিঘা।

শুরুতে জনবল চার পাঁচজনের মতো লাগতো, এখন ২০ থেকে ২৫ জনের মত লাগে প্রতিদিন, সব মিলে মাসে ৬০০/৬৫০ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হচ্ছে রাকিবের কৃষিখামারে।

রাকিব পাবনা সদর উপজেলার মালিগাছা ইউনিয়নের বিলভাদুরী গ্রামের মো: আব্দুল মালেক প্রামানিকের ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে রাকিব সবার বড়। রাকিবের এক ভাই মোহাম্মদ রকি আলী বয়স (২১) পাবনা পলিটেকনিকেলে ইনভাইরনমেন্টাল বিভাগে সপ্তম সেমিস্টারের ছাত্র , ছোট ভাই মো: রিশাদ আলী বয়স (১৭) পাবনা আলিয়া মাদ্রাসায় দশম শ্রেণীর ছাত্র। রাকিবের কৃষিকাজে সবাই সাহায্য করে কমবেশি।

রাকিব ২০১৬ সালে আর এম একাডেমী থেকে এসএসসি পাশ করে, ২০১৮ সালে পাবনা কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাশ করে পাবনা কলেজেই সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ফাইনাল বর্ষের ছাত্র।

পাবনা সদর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আছমা আহাম্মেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে আসছি, সে ক্ষেত্রে রাকিব বেশ সফল।

রাকিব প্রথম পাবনাকে তার ভবিষ্যতের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেন আমি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে জৈবিক উপায়ে রাসায়নিক কীটনাশকমুক্ত নিরাপদ শাকসবজি ও ফসল উৎপাদন করি, যা নিরাপদ অর্গানিক খাদ্য। এগুলো ইধহমষধফবংয এঅচ অনুমোদন নিয়ে রপ্তানী কোয়ালিটি ফসল উৎপাদন করে সুপার শপে ও বিদেশে রপ্তানি করব, ইনশাআল্লাাহ এবং কোকোপিটের মাধ্যমে সুস্থ সবল সকল সবজি চারার নার্সারী প্রতিষ্ঠা করর। এছাড়াও মাশরুম উৎপাদনের উপর একটি প্রজেক্ট করার ইচ্ছা আছে।

রাকিবের বাবা মো: আব্দুল মালেক প্রামানিক প্রথম পাবনাকে বলেন আগে অনেক পরিশ্রম করতে হতো কিন্তু সে তুলনায় আয় ছিল না, আশানুরূপ লাভ হতো না। আর ছেলে কৃষিতে হাল ধরার পর আধুনিক প্রযুক্তি ও কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করায় কৃষি কাজ অনেক সহজ ও লাভজনক পেশায় পরিণত হয়েছে। এবং আমার ছেলে চাকরি না করে আরো দশজনের কাজের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে, এক সময় আমি ওকে কৃষি কাজ করতে নিষেধ করতাম, কিন্তু এখন ও কৃষি কাজ করায় আমার গর্ব হয়।

পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো: জামাল উদ্দিন প্রথম পাবনাকে বলেন ছাত্রবস্থায় আমরা কৃষি কাজের ওপর রাকিবের আগ্রহ দেখে আমরা তাকে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি কাজে উৎসাহী করি সে মনোযোগ দিয়ে কাজ করে এখন সাবলম্বী, আমরা আশাকরি রাকিবের মতো শিক্ষিত যুবকের অংশগ্রহণ স্মার্ট কৃষির স্বপ্নসারথি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মাট কৃষির বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছতে সক্ষম হবে।