খুনি, যুদ্ধাপরাধীরা যেন ক্ষমতায় ফিরতে না পারে – প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

খুনি, যুদ্ধাপরাধীরা যেন ক্ষমতায় ফিরতে না পারে – প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রথম পাবনা ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতাবিরোধী, খুনি, যুদ্ধাপরাধী ও অগ্নিসন্ত্রাসীরা আবার যেন কখনই ক্ষমতায় ফিরতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এই চক্র দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৪ বছরে দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে একে আবারও উন্নয়নের মহাসড়কে তুলেছে। তাই খুনি, স্বাধীনতা বিরোধী, যুদ্ধাপরাধীরা যাতে আর কখনই ক্ষমতায় ফিরতে না পারে তা নিশ্চিত করুন।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ওয়াশিংটনের রিজ কার্লটন হোটেলের হলরুমে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী প্রবাসীদের তাকে দেয়া এক নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ২০১৩ থেকে ১৫ সাল পর্যন্ত তথাকথিত আন্দোলনের নামে বহু মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে এবং রাস্তার পাশের হাজার হাজার গাছ উজাড় করেছে। এদের ব্যাপারে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। আর বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। আমরা এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি।

এদিকে, নাগরিক সংবর্ধনা চলাকালীন হোটেলের পাশে হাল্কা বৃষ্টি ও ঠান্ডার মধ্যে বিক্ষোভরত একদল বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলোচনার আহ্বান জানালে বিক্ষোভকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যান। প্রধানমন্ত্রীর স্পিচরাইটার এম নজরুল ইসলাম সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের সমস্যা নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগ্রহ প্রকাশ করার পরই তারা হোটেলের বাইরে তাদের অবস্থান ত্যাগ করে। এর ফলে প্রধানমন্ত্রীর এই উদার আচরণ শেষ পর্যন্ত বিফলে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধাগুলোকে সর্বোচ্চ কাজে লাগিয়ে দেশে-বিদেশে রাষ্ট্র বিরোধী অপপ্রচার চালানোর জন্যে বিএনপি-জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছি। বিএনপি-জামায়াত জোট ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা ব্যবহার করে আমাদেরই বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এসব অপপ্রচারে কান না দেয়ার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশীসহ সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছে। সবাইকে মাথা উঁচু করে ও যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে বিশ্বে চলতে হবে।

বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সরকার অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ প্রতিটি খাতের উন্নয়ন নিশ্চিত করেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আমরা এটা করতে পেরেছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। আমরা এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ একটি গণমুখী দল এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এটি গঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সবসময়ই জনগণের কল্যাণে কাজ করে। দল যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই দেশের উন্নয়ন হয়। আমরা বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছি এবং একে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর।

দেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদানের কথা উল্লেখ করে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের উন্নয়নে প্রবাসীরা অনেক অবদান রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশবাসীকে হুন্ডির পরিবর্তে বৈধ মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠানোর আহ্বান জানান, কারণ, সরকার যথাযথ প্রক্রিয়ায় রেমিটেন্স প্রেরণকে উৎসাহিত করতে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা করেছে।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের পরও সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা সম্ভব হয়েছে। চলমান যুদ্ধের কারণে উন্নতসহ অনেক দেশ সংকটে পড়লেও বহু দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থা এখনো ভালো।

প্রধানমন্ত্রী খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে দেশবাসীর প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন যেন বাংলাদেশ কোনো সংকটে না পড়ে। দেশের দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ এবং অতি দারিদ্র্যের হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে কোনো চরম দারিদ্র্য থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাংক অনুসরণ করে সারাদেশে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে বাড়ি দিয়ে আসছে। তারা ইতোমধ্যে আবাসন প্রকল্পের আওতায় ৩৫ লাখ লোককে বাড়ি দিয়েছেন এবং তাদের জীবিকা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না, কারণ সরকার প্রতিটি গৃহহীন লোককে বিনামূল্যে আবাসন প্রকল্পের আওতায় আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ লক্ষে আরও ৬০ হাজার ঘর তৈরি হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এ সময় মঞ্চে অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার আমন্ত্রণ, সটকে পড়ল বিএনপি-জামায়াত ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) তার বিরুদ্ধে রিটজ কার্লটন হোটেলের বাইরে বিক্ষোভরত একদল বিএনপি-জামায়াত সমর্থককে আলোচনার জন্য আহ্বান জানালে তারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যায়। এখানে রিটজ কার্লটন হোটেলের হলরুমে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী প্রবাসীদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে নাগরিক সংবর্ধনা দেয়া হয়।

পরে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচরাইটার এম নজরুল ইসলাম এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের সমস্যা নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগ্রহ প্রকাশ করার পরই তারা হোটেলের বাইরে তাদের অবস্থান ত্যাগ করে। তিনি বলেন, নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসার সময় প্রধানমন্ত্রী হোটেলের বাইরে প্রচন্ড ঠান্ডা ও বৃষ্টির মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের একটি গ্রুপকে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে দেখতে পেয়ে তিনি তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা (বিক্ষোভরত বিএনপি-জামায়াত সমর্থক) যা বলতে চায়, এখানে এসে তাদের তা বলতে দাও।’

বিক্ষোভকারীদের হোটেলে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয় অনুমতি পাওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রীর পিএস-২ এবং সেখানকার বাংলাদেশ মিশনের আরও একজন কর্মকর্তা তাদের হোটেলে আমন্ত্রণ জানাতে যান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার আহ্বান শুনেই বিক্ষোভকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যান।

এ ব্যাপারে মুখপাত্র নজরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই উদার আচরণ আসলে শেষ পর্যন্ত বিফলে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছা ছিল তারা (বিএনপি-জামায়াত) আসুক এবং তিনি তাদের কথা আন্তরিকভাবে শুনতে চেয়েছিলেন।