নিজস্ব প্রতিনিধি : বঙ্গবন্ধুর নজর কেড়েছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু । ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি। বন্যাকবলিত মানুষকে বাঁচাতে পাবনার কাশিনাথপুর/নগরবাড়ীতে ‘মুজিব বাঁধ’ উদ্বোধন করতে আসেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তখন পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। যথারীতি জনসভার আয়োজন হলো। স্বাগত বক্তব্যের দায়িত্ব পড়ল সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর ওপর। বক্তব্য দিয়ে ডায়াস থেকে নামার সময় বঙ্গবন্ধু তাঁর হাত ধরে ফেললেন। তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। কপালে চুমু দিয়ে বললেন, ‘তুই তো ভালো বলিস।’
অনুষ্ঠান শেষে বঙ্গবন্ধু হেলিকপ্টারে উঠতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি সাহাবুদ্দিনের কাছে জানতে চাইলেন, ঢাকায় যাবি কি না? তিনি সানন্দে রাজি হলেন। জীবনে প্রথমবারের মতো হেলিকপ্টারভ্রমণের সুযোগ হলো তাঁর, তা-ও রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। ঢাকায় হেলিকপ্টার থামল পুরনো বিমানবন্দর তেজগাঁওয়ে।
ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে ডাকলেন বঙ্গবন্ধু। নির্দেশ দিলেন, ‘ওকে বাসায় নিয়ে খেতে দাও, তারপর খরচ দিয়ে পাবনা পাঠিয়ে দিও।’
১৯৭৩ সালের মাঝামাঝি সাংগঠনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আরেকবার পাবনা আসেন বঙ্গবন্ধু। জনসভার আয়োজন তখন স্টেডিয়ামে। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে সেবারও বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ হয় সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর। বক্তব্য শেষে বঙ্গবন্ধু ঠিক আগের মতোই তাঁকে জড়িয়ে ধরেন। মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করেন। ভবিষ্যতে আরো সফলতা কামনা করেন।
এ দুই ঘটনা গতকাল রবিবার আবারও পাবনাবাসীর অনেকে স্মরণ করেছেন। সাহাবুদ্দিনকে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রপতি পদে দেখতে চাওয়ার মধ্যে অর্ধশত বছর আগের ওই ঘটনার কিছুটা যোগসূত্র খুঁজছেন তাঁরা।
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন দেশের রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছেন—এমন খবর গতকাল পাবনায় পৌঁছালে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। আনন্দ মিছিল করেছে তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরএম একাডেমির শিক্ষার্থীরাও।
পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল প্রথম পাবনাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো।’
সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর রাধানগর মজুমদার একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহপাঠী ও বাল্যবন্ধু এবাদত আলী বলেন, ‘তিনি সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদে অধিষ্ঠিত হতে যাচ্ছেন। এর চেয়ে আনন্দের বিষয় আর কী হতে পারে?’
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আব্দুল হামিদ মাস্টার বলেন, ‘আমরা কাছ থেকে দেখেছি, সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বঙ্গবন্ধুর একজন আদর্শের সৈনিক। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা ছাড়া তাঁর জীবনে কিছুই নেই। বঙ্গবন্ধুই তাঁকে নেতা বানিয়েছেন। ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধু তাঁকে ভালোবাসতেন। আমরা খুবই খুশি। তিনি একজন সুযোগ্য মানুষ।’
পাবনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এ বি এম ফজলুর রহমান বলেন, ‘তিনি ১৯৭৫ সালে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তখন প্রেস ক্লাবের সদস্য পদ লাভ করেন। প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকদের তিনি ভালোবাসেন, সাংবাদিকরাও তাঁকে ভালোবাসেন। তিনি এই প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য।’
সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর পাবনার বাসভবনের পাশের বাড়ির বাচ্চু প্রামাণিক বললেন, ‘তিনি আমার প্রতিবেশী। ঢাকা থেকে পাবনায় এলেই তিনি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, খোঁজখবর নেন। কারো কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলো সমাধান করেন। তিনি অত্যন্ত ভদ্র, নম্র ও বিনয়ী একজন মানুষ।’
সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর ছোট বোন ফারজানা মহিউদ্দিন বলেন, ‘পরিবারের মধ্যে তিনি সবার বড়। যে কারণে বটবৃক্ষের ছায়ার মতো পরিবারকে তিনি আগলে রাখেন। তাঁর মতো এত সুন্দর মনের মানুষ আর হয় না। শুধু ভাই হিসেবে না, মানুষ হিসেবে তিনি তুলনাহীন। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত, উত্ফুল্ল। আমার ভাই এত বড় একটি আসনে অধিষ্ঠিত হতে যাচ্ছেন, এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা।’