অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে চাই আলোকিত তরুণ প্রজন্ম

অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে চাই আলোকিত তরুণ প্রজন্ম

হীরেন পণ্ডিত : তারুণ্য মানব জীবনের সাহসী, সংগ্রামী ও সৃজনশীলতার অধ্যায়। পুরাতনকে ভেঙে, সংস্কার করে নতুন কিছু করাই যেন তারুণ্যের ধর্ম। তরুণদের চিন্তা-চেতনা, মন-মগজে পুরাতনকে সংস্কার করে নতুন কিছু করার ভাবনা তৈরি করতে হবে। সাহসিকতা ও সততার সঙ্গে তরুণ সমাজকে এই সংস্কার কাজে এগিয়ে আসতে হবে। তরুণরা এগিয়ে আসলেই সমাজের সকল স্তরে পরিবর্তনের শুরু হবে। আর এ ক্ষেত্রে তরুণ সমাজের সম্মিলিত প্রয়াস সবচেয়ে কার্যকরী।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, যুবদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছর। সরকারের যুব নীতিতে এই সীমা ১৮ থেকে ৩৫ বছর। বয়সসীমা যদি ২৯ বছর ধরে যুবক হিসেবে ধরা হয়, তাহলে দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ এর নিচে।দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ যুবক। বিভিন্ন আর্থ- সামাজিক বৈচিত্র্যসহ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হলে তরুণদের কথা ভাবতে হবে। তরুণরা বৈশ্বিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেবে।

তারুণ্য হলো মানুষের জীবনে সাহস, সংগ্রাম ও সৃজনশীলতার সময়। পুরাতন ভেঙ্গে সংস্কার করে নতুন কিছু করা যেন তারুণ্যের ধর্ম। সমাজের এই সংস্কার কাজে তরুণ সমাজকে সাহস ও সততার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। তরুণরা সমাজের সর্বস্তরে পরিবর্তনের বিপ্লব শুরু করবে এবং এক্ষেত্রে তরুণ সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই সবচেয়ে কার্যকর। সমাজে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি দেখলে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করতে হবে এবং প্রতিবাদ যদি তরুণ সমাজের কাছ থেকে আসে তাহলে তা কেউ ঠেকাতে পারবে না।

কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব তরুণদের সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে। প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত যুবকদের জন্য এর মাত্রা আরও বেশি। শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব এবং প্রযুক্তিগত বৈষম্য তরুণদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার দিকে পরিচালিত করছে কিনা তা নিয়ে ভাবার সময় এসছে। তরুণ অনেকেই সমাজের মূল স্রোতধারা থেকে দূরে চলে যাচ্ছে কি না তা দেখতে হবে।

তরুণদের এ অবস্থা নানা অসঙ্গতির সৃষ্টি করছে। এ কারণে বাংলাদেশের আর্থ- সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তরুণদের বিচ্ছিন্নতাকে আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। আমাদের দেশের তরুণদের অর্জন অনেক। খেলাধুলা, শিল্প, সাহিত্য ও
সংস্কৃতিতে তরুণরা এগিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন উদ্দীপনা এবং সম্ভাবনাগুলোকে ব্যবহার করে বিভিন্ন উপায়ে এগিয়ে যাচ্ছে তরুণ
সমাজ। তবে তরুণদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের শক্তি দেশ ও জাতির জন্য সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা যেমন স্পষ্ট নয় তেমনি তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। তাদের স্বেচ্ছায় মূলধারায় নেতৃত্ব দিতে হবে। আজকের তরুণ সমাজই ভবিষ্যতের নীতিনির্ধারক। তারা অনিয়ম- দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে সমাজ ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে শুরু করবে। তাই রাষ্ট্র ও সমাজের সকল কল্যাণমূলক কাজে যুবসমাজের অংশগ্রহণ আবশ্যক। তরুণ সমাজ ঘুমিয়ে থাকলে অনিয়ম- দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সমাজের আকাশ থেকে কখনো কালো মেঘের ছায়া সরবে না। সমাজ পরিবর্তন করতে হলে তরুণ সমাজকে
আত্মকেন্দ্রিক চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ক্যারিয়ার গড়ার পাশাপাশি দেশ ও সমাজের কথাও ভাবতে হয়।

সকল সমাজকল্যাণমূলক কাজে এগিয়ে আসতে হবে। যৌবন অসীম প্রাণশক্তির উৎস। সেজন্য তারুণ্যকে কাজে লাগিয়ে জীবনকে গতিশীল ও প্রতিশ্রুতিশীল করতে হবে। জরাজীর্ণ সমাজব্যবস্থা সংস্কার করে নতুন কিছু সৃষ্টির জন্য প্রথমে তরুণ সমাজকে জেগে উঠতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তবেই সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব।
তারুণ্যের শক্তিই পারে সমাজকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ সকল সংস্কার আন্দোলনে তরুণদের ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় ছিল। আমাদের ভবিষ্যৎ অনেক বেশি আশাব্যঞ্জক। তাই একটি আদর্শ সমাজ গঠনে তরুণ সমাজকে কিছু চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। সামাজিক রাষ্ট্র নিয়ে স্বপ্ন দেখতে হবে এবং সেই অনুযায়ী সাহসিকতার সাথে সকল বাধা অতিক্রম করে স্বপ্নের পথে হাঁটতে হবে। সঠিক প্রস্তুতি নিতে হবে এবং তরুণ সমাজের সঠিক প্রস্তুতি শুধু নিজেকে নয়, সমাজকে, রাষ্ট্রকে নিয়ে যাবে অনন্য সাফল্যের পথে। দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ তরুণ। এই তরুণ
সমাজ এখন আমাদের সামাজিক সমস্যা সমাধানের অভিনব শক্তি।

যোগ্য নেতৃত্ব ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে একটি সুখী-সমৃদ্ধ সমাজ গড়তে এবং দেশের অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। কালো মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকা উজ্জ্বল সূর্যের মতো তরুণ সমাজ। সমাজের কতিপয় অসাধু, দুর্নীতিবাজ মানুষ ব্যক্তিস্বার্থে পরিকল্পিতভাবে তরুণ সমাজকে বিভিন্ন অপরাধমূলক, অসামাজিক কাজে ব্যবহার করার চেষ্টা করে। তবুও এসব প্রতিকূলতার মধ্যেও সমাজের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ ও কিছু সমাজ সেবকের সহযোগিতায় সারাদেশের তরুণ-তরুণীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে উঠছে বিভিন্ন সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

এসব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সমাজের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের সংকটময় মুহূর্তে বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগকে সফল করতে তারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়াও, যুবকরা দুর্যোগ-পরবর্তী উদ্ধার কাজ এবং ক্ষতিগ্রস্ত ও
বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য তহবিল সংগ্রহসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
তারুণ্যের সহায়তায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে সমৃদ্ধির পথে।

তারুণ্যের সহায়তায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে সমৃদ্ধির পথে। তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নের বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উনয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সে জন্য বর্তমান সরকার মজুরির মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে তরুণদের জন্য উপযুক্ত চাকরি নিশ্চিত করতে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিচ্ছে- উপার্জন এবং আত্ম-কর্মসংস্থান।

আমাদের কর্মসংস্থানের দিকে নজর দিতে হবে। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস না করে সঠিকভাবে শিক্ষিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য শিক্ষকদের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি অভিভাবকদের এবং সুশীল সমাজেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সরকারি দল, বিরোধী দল, নাগরিক সমাজসহ সমাজের প্রত্যেকেরই কর্মসংস্থান সৃষ্টির দায়িত্ব রয়েছে।

চাকরি সৃষ্টি একটি বড় চ্যালেঞ্জ; দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ত্রুটিমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। বাইপাস করে চাকরি পাওয়া সম্ভব নয়। বড় ডিগ্রি নিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। শিক্ষা ব্যবস্থা বাজারের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ায় দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা শ্রমবাজারে দক্ষ ও শিক্ষাগতভাবে যোগ্য শ্রমিকের চাহিদা মেটাতে পারছে না। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষায় বিশেষ দক্ষতার অভাবে চাকরির বাজারের চাহিদা মেটাতে পারছে না পড়াশোনা শেষ করা তরুণ-তরুণীরা। কলেজের স্নাতকদের মধ্যে মাত্র ১৯ শতাংশ ফুল-টাইম বা পার্ট-টাইম নিযুক্ত, যেখানে প্রায় অর্ধেক বেকার। অধিকন্তু, মহিলা স্নাতকদের স্নাতক হওয়ার দুই বছর পরেও বেকার এবং পড়াশোনার বাইরে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি: ৩৭ শতাংশ পরুষ স্নাতকদের বিপরীতে ৪৩ শতাংশ মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক বেকার থাকে।

কিন্তু তরুণদের বেকারত্বকে অর্থনীতির জন্য একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া আমাদের নীতিমালায় অনুপস্থিত। জাতীয় যুব নীতি ২০১৭ যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে পর্যাপ্ত মনোযোগ দেয়া হয়নি বলে মনে করেন অনেকে। নীতিমালায় তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেই। অবশ্য অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের অবদান বেশি হওয়ায় কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস হতে হবে বেসরকারি খাতকে। সেখানে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারকে নীতিগত সহায়তা দিতে হবে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য শিক্ষায় কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। এ জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন কাঠামো, তদারকি ও মান নিয়ন্ত্রণ যথাযথভাবে করতে হবে। উচ্চশিক্ষার কারিকুলাম তৈরি করতে হলে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী কারিকুলাম হালনাগাদ করতে হবে। আইন প্রণেতা, নিয়োগকর্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। সরকারকে কিছু প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নিতে হবে। শুধু ভালো শিক্ষাই নয়, সতর্কতা ও নিষ্ঠাও সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আমরা
শিক্ষা পেয়ে জীবনকে পেশা হিসেবে দেখতে চাই, আমরা বেকারত্বের অভিশাপ দেখতে চাই না, তরুণদের হতাশ দেখতে চাই না, আমরা উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে চাই। তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা খুবই জরুরি।

এ জন্য আগামী বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে। কিন্তু বাজেটকে বিভিন্নভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রক্রিয়ায়
একটি কার্যকর উপায় হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। অবকাঠামোগত প্রকল্পে বিনিয়োগ, রাস্তা সম্প্রসারণ এবং অন্যান্য.
কর্মশক্তির বিভিন্ন বিভাগের জন্য চাকরি তৈরি করে। চাকরির সংখ্যা, তাদের ধরন এবং কোন সেক্টরে চাকরি তৈরি করা হবে তার একটি চিত্র থাকতে হবে।

যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দক্ষতা উনয়ন প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তবুও চাকরির বাজারে দক্ষতার বিশাল ঘাটতি রয়েছে। বেসরকারি খাতের অনেক কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাব, বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের যুবকদের মধ্যে, কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব দেখায়, যা তাদের আরও পিছনে ঠেলে দিচ্ছে। একটি প্রগতিশীল ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনের জন্য যুব সমাজকে মূলধারায় যুক্ত করার জন্য আমাদের উপরোক্ত বিষয়টিতে মনোনিবেশ করা উচিত।

আজকের তরুণ সমাজ ভবিষ্যতের নীতিনির্ধারক। তারা যদি অনিয়ম আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়, তাহলে সমাজে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসতে শুরু করবে। তাই রাষ্ট্র ও সমাজের সকল কল্যাণমূলক কাজে তরুণদের অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। তরুণ সমাজ ঘুমিয়ে থাকলে অনিয়ম আর দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সমাজের আকাশ থেকে কালো মেঘের ছায়া কখনো দূর হবে না। সমাজ পরিবর্তন করতে চাইলে তরুণ সমাজকে আত্মকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। নিজের ক্যারিয়ার গঠনের পাশাপাশি দেশ ও সমাজ নিয়ে ভাবতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে সমাজকল্যাণমূলক সকল কাজে। তারুণ্য হচ্ছে অফুরন্ত প্রাণশক্তির আধার। তাই তারুণ্যকে কাজে লাগিয়ে জীবনকে করতে হবে গতিশীল ও প্রত্যাশাময়। জরাজীর্ণ সমাজ ব্যবস্থাকে সংস্কার করে নতুন কিছু রচনার জন্য সবার আগে তরুণ সমাজকেই জাগতে হবে।

তরুণ্য হলো সমাজের প্রাণশক্তি। সমাজের কিছু অসাধু, ব্যক্তি স্বার্থে তরুণ সমাজকে নানা অপরাধমূলক, সমাজবিরোধী কাজে পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করে। তবুও এসব প্রতিকূলতার মাঝেও সমাজের কিছু মহৎপ্রাণ ব্যক্তি, দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ, কিছু সমাজসেবী মানুষের সহযোগিতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে তরুণ সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিভিন্ন সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে উঠছে। এসব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো নিঃস্বার্থভাবে সমাজের জন্য কাজ করছে। এছাড়া তরুণরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ-পরবর্তী উদ্ধার কাজ ও ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দিতে অর্থ সংগ্রহ করাসহ নানামুখী জনকল্যাণমূলক কাজ করে। তারুণ্যের হাত ধরেই বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে নিয়েই বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে।

এসডিজি বাস্তবায়নে তরুণরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানসম্মত এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা এবং কন্যাশিশুদের ক্ষমতায়ন করাসহ স্থায়ী অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক কার্যক্রম উৎসাহিত, পরিপূর্ণ ও উৎপাদনশীল কর্মসংসংস্থান এবং উপযুক্ত কর্মের নিশ্চয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তরুণরা কাজ করছে।
জাতিগতভাবে আমরা যতবার সফল হয়েছি এবং বিজয়ের মুখ দেখেছি প্রতিটি ক্ষেত্রেই তরুণদের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। কারণ তরুণরা স্বপ্ন দেখে সুন্দর এক ভবিষ্যতের, তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়িত করতে এবং নিজেদের প্রতিষ্ঠায় তারা সংগ্রাম করে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে।

ক্ষুধা এবং দারিদ্র্য নির্মূলে তারাই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বাংলাদেশে কর্মক্ষম বা তরুণদের সংখ্যা যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি এবং আগামী ২০৩৭ পর্যন্ত মানব সম্পদ বিনিয়োগ এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের সর্বোত্তম সময়। তাই আমাদের তরুণ জনগোষ্ঠীকে সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে জাতি হিসেবে আমরা উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছাতে পারি যদিও এটি কোনো স্বয়ংক্রিয় বিষয় নয়। তরুণদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে গঠনমূলক কাজে নিয়মিত অংশগ্রহণের জন্য উজ্জীবিত করা গেলে সারাদেশে একটি বিরাট কর্মযজ্ঞ সৃষ্টি হতে পারে। আর এ ধরনের কর্মযজ্ঞ বাংলাদেশের জন্য
একটি অমিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে।

তরুণরা সুবিধা ও অধিকারবঞ্চিত মানুষের সার্বিক জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে বাল্যবিবাহ ও যৌতুক প্রতিরোধে উদ্যোগী ভূমিকা
নিচ্ছে। মাদকের সর্বনাশা ছোবল থেকে সমাজকে মুক্ত রাখার লক্ষ্যে তরুণ সমাজকে সচেতন ও সংগঠিত করে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলছে। একটি সুস্থ্য, সুন্দর, উদার ও বহুমাত্রিক সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় নিয়মিত কর্মশালা, উঠান বৈঠক করছে। অসচ্ছল পরিবারের শিশু-কিশোরদের পড়াশুনায় সহায়তা দিচ্ছে এবং বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তরুণ প্রজন্ম যাতে কুসংস্কার ও পশ্চাৎপদতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে; সহিংসতা প্রতিরোধ করতে পারে; বিজ্ঞানমনস্ক এবং যুক্তিবাদী হিসেবে গড়ে উঠতে পারে সে লক্ষ্যে দেশে বেশি করে বিজ্ঞান ক্লাব গড়ে তোলা প্রয়োজন। বিজ্ঞান ক্লাবগুলো হবে স্টাডি
সার্কেলের মাধ্যমে নিজেদেরকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চর্চা কেন্দ্র।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক