শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন এক উচ্চতায়
হীরেন পণ্ডিত : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নয়াদিল্লির লোক কল্যাণ মার্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হন সম্প্রতি জি২০ উপলক্ষ্যে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে উষ্ণ বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষ মোদি বলেছেন, আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূূ, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সন্তোষজনক। বৈঠকে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, বৈঠকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা
করেছেন নরেন্দ্র মোদি। সেই সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতির জন্য শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন।
জি২০ সম্মেলন ও দ্বিপক্ষীয় আলোচনার জন্য ৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে নয়াদিল্লি আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারত সফরে প্রথম
কর্মসূচি ছিল নরেন্দ্র মোদির বাসভবনের এ বৈঠক। ভারতের স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৫টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৌঁছান নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে। শেখ হাসিনাকে নিজেই এসে অভ্যর্থনা জানান মোদি। এরপর শুরু হওয়া বৈঠক চলে ঘণ্টাব্যাপী।
প্রথমে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল আনুষ্ঠানিক আলোচনা করে। পরে একান্তে কথা বলেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। বৈঠক শেষে টুইটবার্তায় নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। গত নয় বছরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি খুবই সন্তোষজনক। আমাদের আলোচনায় কানেকটিভিটি, বাণিজ্যিক সংযুক্তি এবং আরও অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল।’
বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উভয় প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেন। উভয় প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের অবদান গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং তাঁকে জি২০ লিডার্স সামিটে আমন্ত্রণের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বিশ্বের অন্য অংশের, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে জি২০-এর মতো বৃহৎ পরিসরের সামনে তুলে ধরে তাঁদের স্বার্থ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। উভয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতের বিদ্যমান গভীর সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এ সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য একমত হয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রভূত উন্নতির জন্য শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের প্রাক্কালে দুই দেশের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকগুলো হচ্ছে- কৃষি ক্ষেত্রে সহায়তার জন্য বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিল ও ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব এগ্রিকালচারাল রিসার্চের মধ্যে সমঝোতা। এ সমঝোতা স্মারকের আওতায় দুই দেশের মধ্যে কৃষি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ খাতে সহযোগিতা জোরদার হবে। সাংস্কৃতিক সহযোগিতা সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক খাতে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদারকরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
তৃতীয় সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে ভারতের এনপিসিআই ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্টস লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে। এ সমঝোতা স্মারকের ফলে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক লেনদেন সম্পাদন সহজতর হবে। এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। একান্ত বৈঠকে আলোচনা হলে তা আমার জানা নেই। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ভাগনে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। ভারতের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর, পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ)
অজিত দোভাল প্রমুখ। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভারতের সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উভয় দেশের মধ্যকার বিদ্যমান অনিষ্পন্ন সমস্যা সমাধানে আলোচনার তাগিদ দিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে নয়াদিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নয়াদিল্লিতে ৯-১০ সেপ্টেম্বর জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে এই সফর। প্রসঙ্গত, ভারতে হতে যাওয়া এবারের জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ৯টি দেশকে অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে দেশটি। ভারতের মধ্যে বিদ্যমান নানা সম্পর্কের ভিত্তিতে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়েছে। এসময় প্রধানমন্ত্রী আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদান গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং তাকে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণের জন্য
ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বিশ্বের অনগ্রসর অংশের, বিশেষ করে ‘গ্লোবাল সাউথ’ এর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহকে জি-২০ এর মত বৃহৎ পরিসরের সামনে তুলে ধরে তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এসময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী জি-২০ এর বৈঠকসমূহে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশের প্রতি সাধুবাদ জানান। উভয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ এবং ভারতের বিদ্যমান গভীর সম্পর্কের বিষয়ে সস্তোষ প্রকাশ করেন এবং এই সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নিতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য একমত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, গত বছরের ০৪-০৮ সেপ্টেম্বর তারিখে নয়াদিল্লীতে তাঁর সফল রাষ্ট্রীয় সফরের পর দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানাবিধ ক্ষেত্রে প্রভূত দৃশ্যমান অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এই জন্য উভয় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্যের কথা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রভূত উন্নতির জন্য প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই বৈঠক ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরো এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে। তারা মনে করছেন, এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যেকার ‘পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস ও মৈত্রীরই প্রতিফলন ঘটেছে। পরারাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে জানান, ‘আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা’র বিষয়টি বৈঠকে খুবই গুরুত্ব পেয়েছে।তিনি বলেন, “আমাদের ইস্যু যেটা, সেটা হল আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা। আমরা বারবার এই কথাটা বলছি, ভারতও একই কথা বলছে।” “এই জিনিসটা নষ্ট হলে আমাদের উভয় দেশে তো বটেই, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াতেই তার প্রভাব পড়বে। আমরা এই কথাটা বৈঠকে বলেছি, ভারতও তার সঙ্গে একমত হয়েছে”।
ভারত থেকে বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ অনুরোধ রাখতেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুরোধ জানিয়েছেন বলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়েও বৈঠকে ভারতের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। নরেন্দ্র মোদী ও শেখ হাসিনার মধ্যে শেষ ‘ইন-পার্সন’ বৈঠক হয়েছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরে, যখন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে এসেছিলেন। আর এই বৈঠক হল এমন একটা সময়ে যখন বাংলাদেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের মাত্র তিন বা সাড়ে তিন মাস বাকি।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি ভারতের সমর্থনকে যেহেতু খুব জোরালো একটা ফ্যাক্টর বলে মনে করা হয়, তাই সে দেশে নির্বাচনের ঠিক আগে দু’জনের এই বৈঠকের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক তাৎপর্যও ছিল অপরিসীম। এই পটভূমিতে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভারতের দৃঢ় সমর্থন ও সাহায্যের অঙ্গীকার অক্ষুণ্ণ থাকবে ভারত বৈঠকে এই আশ্বাস দিয়েছে বিভিন্ন সূত্র থেকে বলা হচ্ছে।
দিল্লিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠককে উভয় দেশের পক্ষ থেকেই যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছিল বেশ আগে থেকেই। বিশেষত মাত্র দু’সপ্তাহ আগে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যেহেতু দু’জনেই উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে কোনও বৈঠক হতে পারেনি তাই দিল্লিতে এই বৈঠকের একটা আলাদা গুরুত্বও ছিল। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলছিলেন, “ব্রিকসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গিয়েছিলেন আয়োজক দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার আমন্ত্রণে।” “আর দিল্লিতে তিনি এসেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিশেষ আমন্ত্রণে ফলে জি-টোয়েন্টি নিয়ে আমাদের যতই ব্যস্ততা থাকুক দুই নেতার মধ্যে এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকটা আমাদের করতেই হতো।”
বস্তুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দিল্লি বিমানবন্দরে নামছেন, তার কয়েক মিনিট আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই টুইট করে জানান, “আজ সন্ধ্যায় আমার বাসভবনে আমি তিনটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।” তিনি আরও জানান, সন্ধ্যাবেলা তিনি একে একে মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রভিন্দ জুগনাথ, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে তিনটি আলাদা দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। “এই বৈঠকগুলো এই তিনটি দেশের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পর্যালোচনা এবং উন্নয়নমূলক সহযোগিতাকে আরও শক্তিশালী করে তোলার সুযোগ এনে দেবে”, মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
জি-টোয়েন্টির মূল বৈঠক শুরু হওয়ার আগেই তিনি যেভাবে তিনটি নির্দিষ্ট দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে আলাদা করে নিজের সাত নম্বর লোককল্যাণ মার্গের বাসভবনে বৈঠক করলেন, সেটাকেও পর্যবেক্ষকরা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্ক ইদানীংকালে কতটা ঘনিষ্ঠ, সে কথা সুবিদিত।
আন্তর্জাতিক জোট কোয়াডেরও সদস্য উভয়ে পাশাপাশি মরিশাসের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কও খুবই পুরনো ও অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সঙ্গেও একই দিনে বৈঠকের একটি কূটনৈতিক, রাজনৈতিক বা কৌশলগত বা স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব রয়েছে।
জি-টোয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের পক্ষে যিনি কোঅর্ডিনেটর বা প্রধান সমন্বয়কারীর ভূমিকায় আছেন, সেই হর্ষবর্ধন শ্রিংলাও এদিন মনে করিয়ে দিয়েছেন, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশকেই কিন্তু ভারত জি-টোয়েন্টিতে বিশেষ আমন্ত্রণ
জানিয়েছে।
জি-টোয়েন্টির সভাস্থলে দাঁড়িয়েই ভারতের এই সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও ঢাকায় নিযুক্ত প্রাক্তন হাই কমিশনার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী হিসেবেই বাংলাদেশকে এই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, এটা খেয়াল করাটা জরুরি।”
প্রধানমন্ত্রী মোদী যে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে সবার আগে দেখা করছেন, তার মধ্যে যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও আছেন সেটাকেও তিনি ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ’ একটা বিষয় বলে বর্ণনা করেন। বস্তুত জি-টোয়েন্টিতে দু’ডজনেরও বেশি সদস্য ও আমন্ত্রিত দেশের নেতাদের উপস্থিতির মধ্যেও ঘরের পাশের বাংলাদেশকে স্বাগতিক দেশ ভারত যে আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছে, এটা বোঝানোর জন্য কোনও চেষ্টাই বাদ রাখা হয়নি।
ভারত ও বাংলাদেশের দুই নেতার মধ্যে মুখোমুখি বা ভার্চুয়ালি যে কত ঘন ঘন দেখা হয় এবং বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়, সেটা মনে করিয়ে দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচীও এদিন বিকেলের দিকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে সরকার পাঠিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর মোদীর আস্থাভাজন বলে পরিচিত, রেল প্রতিমন্ত্রী ও গুজরাটের সুরাট থেকে নির্বাচিত এমপি দর্শনা বিক্রম জারদোশকে। সঙ্গে ছিলেন দিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ ও
মিয়ানমার ডেস্কের যুগ্ম সচিব স্মিতা পন্থও। এছাড়া ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান ও দূতাবাসের সিনিয়র কর্মকর্তারাও প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে স্বাগত জানাতে টারম্যাকে উপস্থিত ছিলেন। লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, জি-টোয়েন্টিতে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে দিল্লিতে এসে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা কিন্তু এই মঞ্চটিকে বাংলাদেশের আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক কূটনীতির স্বার্থেও যথাসম্ভব ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংযোগ, ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা, ঐতিহ্য এবং শিল্পকলা সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে যেমন মিল রয়েছে তেমনি এই বিষয়গুলোর প্রতি দুই দেশের মানুষের আবেগও প্রায় একইরকম। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে ভারত বাংলাদেশের জন্য সরাসরি যুদ্ধে জড়ালেও, তাদের সীমান্ত খোলা রেখেছিল পাকিস্তানিদের দ্বারা বাঙালিদের গণহত্যার শুরু থেকেই। নিষ্ঠুরতা থেকে বাঁচতে দেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। ভারত সরকার নানা অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধে নিপীড়িত মানুষদের দীর্ঘ ৯ মাস আশ্রয় দিয়েছে, খাদ্য দিয়েছে।
স্বাধীন বাংলাদেশের সঙ্গে তার প্রতিবেশী ভারতের সম্পর্কের সূচনা হয় ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারত কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের মধ্য দিয়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ইন্দিরা গান্ধীর কূটনৈতিক প্রজ্ঞা ও আদর্শিক নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে সেই সম্পর্ক ভিন্ন উচ্চতায় পৌঁছায়। ১৯৭২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চিরদিন অটুট থাকবে। বিশ্বের কোনো শক্তিই পারবে না এই মৈত্রীতে ফাটল ধরাতে।’ বঙ্গবন্ধু দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি গড়েছিলেন, একে অপরের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখন্ডতা, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধার ভিত্তিতে। বঙ্গবন্ধু প্রদর্শিত কূটনৈতিক সম্পর্কের পথেই চলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কৌশলগত পরিস্থিতির কারণে একে অন্যের বৈদেশিক নীতিতে দুই দেশই অগ্রাধিকার পেয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালে পরিবারের সব সদস্যকে হারিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ভারতের আশ্রয় ছিলেন ছয় বছর। শেখ হাসিনা সরকারের সফল কূটনৈতিক তৎপরতায় ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত স্থলসীমানা ও সমদ্রসীমা শান্তিপূর্ণভাবে নির্ধারিত হয়েছে। ২০১১ সালে সীমানা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ-ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করে, যা তিন বিঘা করিডর চুক্তি নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশি নাগরিকদের তিন বিঘা করিডোর দিয়ে ২৪ ঘণ্টা যাতায়াতের পক্ষে সম্মত হয়। ২০১৫ সালে ভারতীয় সংসদ, সর্বসম্মতভাবে ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত স্থলসীমানা চুক্তি অনুমোদন করে যার ফলে দুই দেশের সীমানা
নিয়ে বিবাদ শেষ হয়। ২০১৫ সালে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে ৫০ হাজার বিচ্ছিন্ন নাগরিক, যাদের কোনো জাতীয়তা ছিল না, তারা ভারত অথবা বাংলাদেশের নাগরিক হন। ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে তৎকালীন ১১১টি ভারতের ছিটমহল বাংলাদেশের এবং বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারতের অংশ হয়ে যায়। বাংলাদেশ পায় ১৭ হাজার ২৫৮ একর এবং ভারত পায় ৭ হাজার ১১০ একর ভূমি।
দুই পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণ করে এবং সুষমভাবে চুক্তিটি যদি সম্পাদন করা যায় তবে তা দুই দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য সুফল বয়ে নিয়ে আসবে। অভিন্ন ইতিহাস একই ধরনের মূল্যবোধ, ঐতিহ্য, শিল্প, সামাজিক প্রেক্ষাপটে এই ধরনের পারস্পরিক উন্নয়নের সদিচ্ছা থাকা স্বাভাবিক। দ্বিপক্ষীয় উন্নয়নের সদিচ্ছার পাশাপাশি বাস্তবায়নেও জোর দিতে হবে।
বাংলাদেশ-ভারত পরস্পরের ভৌগোলিক সীমারেখা, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নকে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। দুই দেশই পরস্পরের উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে বেশ সক্রিয়। ২০১১ ও ২০১৪ সালে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ভারত বাংলাদেশকে ঋণসহায়তা দেয়। বিভিন্ন ঋণচুক্তির আওতায় (২০২০ সাল পর্যন্ত) বাংলাদেশকে ৮০০ কোটি ডলারের সহায়তা দিয়েছে ভারত, যা একক কোনো দেশকে দেওয়া সর্বোচ্চ সহায়তা। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সামরিক চুক্তি সম্পাদিত হয়। এক দশক আগে শুরু হওয়া ঐ ঋণ চুক্তির বাস্তবায়ন নানা কারণে ধীর হলেও আশা করা যায় দ্রুতই গতির সঞ্চার হবে। বিশ্বায়নের যুগে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্ক তৈরিতে যোগাযোগ ব্যবস্থার বিকল্প নেই। গত কয়েক বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি, অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল রুট-সম্পর্কিত প্রটোকল, ঢাকা-গুয়াহাটি-শিলং এবং কলকাতা-ঢাকা- আগরতলা বাস সার্ভিস, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার-সম্পর্কিত সমঝোতা স্মারকসহ বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা দেশ দু’টির আন্তঃযোগাযোগ সম্প্রসারণে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছে। আখাউড়া আগরতলা রেল সংযোগ, খুলনা-মোংলা রেল সংযোগ এবং মিতালি এক্সপ্রেস চালু হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন হয়েছে। সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সব স্থল ও নৌ সংযোগগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ সুদৃঢ় হয়েছে। পদ্মা রেললিংক ও খুলনা-মোংলা রেলপথ দুই দেশের যোগাযোগের জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মানুষে মানুষে যোগাযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থার অগ্রগতি বিশাল ভূমিকা রাখবে।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এ বিবেচনায় ১৯৯৬ সালে দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যৌথ নদী কমিশনের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সাতটি নদীর পানিবণ্টনের রূপরেখা চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছে এবং আটটি নদীর পানির তথ্য-উপাত্ত বিনিময়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া যৌথ নদী গঙ্গার পানির সর্বোচ্চ ব্যবহারেও একটি যৌথ সমীক্ষার বিষয়ে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে চ্যালেঞ্জ রয়েছে তবে তা পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে সমাধান করা সম্ভব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে পারস্পরিক সহযোগিতায় জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে মোকাবিলা করা যায় এবং অভিন্ন নদীগুলোর পানি সম্পদের সুষম ব্যবহার কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, তা আলোচিত হলে উভয় দেশই লাভবান হবে।
বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশই সন্ত্রাসবাদ নিরসনে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ভূমিকা রাখছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ৯৬ দশমিক ৭ কিলোমিটার, যা বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘ সীমান্ত। দুই দেশের বন, নদী, গ্রাম এবং কৃষিজমির ওপর এই সীমান্ত বিস্তৃত, তাই দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীদের জন্য সীমান্তের ব্যবস্থাপনা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্ত হত্যা কমে এলেও, সীমান্তে নিরস্ত্র লোকজনের হত্যা পুরোপুরি বন্ধের বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের আরো কাজ করতে হবে। সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মানব, মাদক ও সব ধরনের চোরাচালান বন্ধ করতে চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে উপযুক্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে। করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্ব একটি সংকটকাল পার করেছে। ফলে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। দ্রুত পরিবর্তনশীল ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারসাম্য রক্ষা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অভ্যন্তরীণ সমর্থ বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন জরুরি। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় খাদ্যসামগ্রী, ভোজ্য ও জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার প্রভাব দক্ষিণ এশিয়াতেও ব্যাপকভাবে পড়ছে। এই বৈশ্বিক বাস্তবতায় জ্বালানি খাতে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতায় মনোযোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ, কারণ ভারত জ্বালানি খাতে তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে পারস্পরিক সহযোগিতার বিকল্প নেই।
যুদ্ধের কারণে বিশ্ব যে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে সেখান থেকে উত্তরণের জন্য বিশ্বস্ত প্রতিবেশী হিসাবে বাংলাদেশ এবং ভারতের একে অপরের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষতা, নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর থেকে অনেক এগিয়ে আছে। তবে বাংলাদেশ কিংবা এই উপ-অঞ্চলের কোনো দেশ একা টেকসই সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে না। দ্রুত পরিবর্তনশীল ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারসাম্য রক্ষা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন জরুরি। শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল আঞ্চলিক পরিস্থিতি ও নিরাপদ প্রতিবেশী উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে অবশ্য প্রয়োজনীয়। ভারত আর বাংলাদেশের উন্নয়নের
চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি অনেকটা একই রকম। আবার আমাদের আপামর জনগণের জন্য উন্নত জীবনের আকাক্সক্ষাও প্রায় অভিন্ন। একে অন্যের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার, জ্ঞান বিনিময়ের এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার অসংখ্য সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের অনুসৃত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বৈশ্বিক রাজনীতিতে নিরপেক্ষ নীতি দুই দেশের সৌহার্দপূর্ণ ভবিষ্যতের জন্য অপরিমেয় ভূমিকা রাখতে পারে। প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর বর্তমান বৈশ্বিক
সংকটময় পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি পারস্পরিক উন্নয়ন, আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা আরো সুসংহত করবে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্র ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে আরেকটি মাইলফলক অগ্রগতি সূচিত হয়েছে সম্প্রতি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। আর সে কারণেই দুই দেশের মধ্যকার সহযোগিতামূলক সম্পর্ক দ্রুত এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ ও ভারত দক্ষিণ এশিয়ার দু’টি প্রতিবেশী রাষ্ট্র। দুটি দেশ একই সঙ্গে সার্ক, বিমসটেক, আইওয়া এবং কমনওয়েলথের সাধারণ সদস্য। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক উদারীকরণের সূত্রপাতের সঙ্গে তা বৃহত্তর প্রবৃদ্ধি ও বাণিজ্যের উদ্ভব ঘটায়। বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশই সন্ত্রাসবাদবিরোধী কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ভূমিকা রাখছে। তারা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কেও ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা হয়।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ঐতিহাসিক ভিত্তি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ যা অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রীয় চেতনাকে বেগবান করা। ফলে দুই দেশের নীতি-নির্ধারকদের কাছে সম্পর্কের আস্থা সুসংহত করে বিদ্যমান বিরোধগুলোকে সহনশীল মাত্রায় নামিয়ে আনা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। এ সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধা, আস্থা ও সহযোগিতার মাধ্যমে আরও গভীর হবে- তাতে দুই দেশের মানুষই ভালো থাকবে। বাংলাদেশ-ভারত সুসম্পর্ক দুই দেশের উন্নয়ন ও নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য। কোনো ষড়যন্ত্র বা ভুল বোঝাবুঝি যেন দুই দেশের সম্পর্ক দুর্বল না করতে পারে সেদিকে সবাইকে নজর রাখতে হবে।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক