শেখ হাসিনা অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে তুলছেন সোনার বাংলা । হীরেন পণ্ডিত

শেখ হাসিনা অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে তুলছেন সোনার বাংলা । হীরেন পণ্ডিত

জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা লোক দেখান যে নিঃস্বার্থভাবে দেশের জন্য কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মেঘ দেখে তুই করিস না ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে। হারা শশীর হারা হাসি অন্ধকারেই ফিরে আসে।’ তিনি বলেন আমরা তো অনেক রকমের কথা শুনি, আজকেই এ সরকার ফেলে দেবে। কালকেই এটা করবে, ওটা করবে।

আজ যে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা পেলাম, এটা আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় না আসে, বাস্তবায়ন করবে কে? আমাকে একটা লোক দেখান, সেটা করতে পারবে। নিঃস্বার্থভাবে দেশের জন্য কাজ করবে, একটি মানুষ দেখান। সে রকম কোনো নেতৃত্ব আপনারা যদি দেখাতে পারেন আমার কোনো আপত্তি নেই।

আগামী ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে বাংলাদেশ। উন্নয়নশীল দেশ করতে হলে আওয়ামী লীগকে আগামী মেয়াদেও ক্ষমতায় আনা দরকার বলে মনে করেন সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে দেশকে উন্নীত করতে হলে আমাদেরকে দরকার। তাই আমি জনগণকে বলব, বারবার আমাদের নির্বাচিত করেছেন, দেশের সেবা করতে পেরেছি বলে আজ দেশটা উন্নয়নের এ ধারায় নিয়ে আসতে পেরেছি, দারিদ্রের হার কমাতে পেরেছি।

অর্থনৈতিক সংকটের কথা প্রসঙ্গে বলেন এত বাধা, প্রতিরোধ, সমালোচনা হচ্ছে। তারপরও সরকার দেশের অর্থনীতির
চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। এখানে ভয়ের কিছু নেই। সময়ে সময়ে সমস্যা আসেই। এ সমস্যা দেখে ঘাবড়ালে চলবে না। এটা মোকাবিলা করতে হবে। জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৮ সালে ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছিল বলেই আমরা দেশ পরিচালনা করে এই বাজেট দিতে পারছি। এই বাজেটটি আমাদের মেয়াদের
১৫তম এবং চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। কারণ নির্বাচন এই বছরেরই শেষে অথবা আগামী বছরের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত
হতে হবে নির্বাচন। কাজেই এটা আমাদের শেষ বাজেট।

তবে একেবাওে শেষ কি না, সেটা বাংলাদেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে। সেই সিদ্ধান্তের দায়িত্ব বাংলাদেশের জনগণকেই আমি
দিচ্ছি।” মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানা কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য চলতি অর্থবছরে এবং আগামী অর্থবছরেও কৃছ্রতাসাধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিশেষ করে চালের ওপর আমদানি
শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। রেগুলেটরি ডিউটি ২৫ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। ডিজেলের মূল্য কমাতে আগাম
কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রায় সাড়ে চৌদ্দ বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আছেন এবং জনগণের কল্যাণে নিবেদিত হয়ে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনা যে ইতিহাসের পথে হেঁটেছেন, সমসাময়িক ইতিহাসে কাউকে খুব একটা এভাবে দেখা যায় না। আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে পারে বঙ্গবন্ধুর রক্তের একজন উত্তরাধিকার বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য তখন অপরিহার্য হয়ে উঠেছিলো। এটা প্রয়োজন ছিলো আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই। সবাই জানতেন শেখ হাসিনা ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছেন। ইডেন গার্লস কলেজের ভিপি ছিলেন।

ছয় দফা আন্দোলনের সময় রাজপথে ছিলেন। তাই ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের বিশেষ কাউন্সিলে
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে প্রবাস জীবনযাপনকারী শেখ হাসিনাকেই বানানো হলো দলের সভাপতি। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ সন্তান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ২৮ সেপ্টেম্বর এদেশের মানুষের জন্য এক মাহেন্দ্রক্ষণ। শুভ জন্মদিন, দীর্ঘজীবী হোন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা বাঙালি জাতির প্রেরণার উৎস। আওয়ামী লীগকে তৃণমূল বিস্তৃত জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলে পরিণত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর নির্বাসিত কন্যা শেখ হাসিনা চরম দুঃসময়ে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে হাল ধরেছেন। গণতন্ত্রের সংগ্রামে দীর্ঘ পথ হেঁটেছেন। বার বার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। আওয়ামী লীগকে জনপ্রিয় দল হিসেবে ২১ বছর পর ক্ষমতায় এনেছেন এবং গণতন্ত্রকে
প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য নিরলস কাজ করছেন।

আওয়ামী লীগ এ দেশের স্বাধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের যে কোন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তির পাশাপাশি সকল রকম শোষণ, বঞ্চনা, অন্যায়, অবিচার, জুলুমের বিরুদ্ধে সবসময় রাজনৈতিকভাবে সোচ্চার, প্রতিবাদী ভূমিকা রেখে এসেছে এবং এখনো রাখছে। এই দল যখন ক্ষমতায় থাকে তখন মানুষের ভাগ্যের উন্নতি ঘটে। এ দলের জন্মকাল থেকে শুরু করে এই ৭৪ বছরের ইতিহাস সেই সত্যের স্বাক্ষর বহন করে।

এই উদ্যোগ শেখ হাসিনাকে সুযোগ করে দিয়েছিল দলকে ঐক্যবদ্ধ করার। সেই ঐক্যবদ্ধ শক্তি নিয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬
সালের নির্বাচনে বিজয় লাভ করে ২১ বছর দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে শেখ হাসিনা যে অসম্ভব কাজটি সম্ভব করে তুলেছিলেন সেটি হচ্ছে, তাঁর পরিবারের ঘাতকদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো এবং পরবর্তীতে
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা। আর বাঙালি জাতির আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যাবার সুযোগ হাতে এলো।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণ, উন্নয়ন ও মুক্তির পথ ও পাথেয় হয়ে কাজ শুরু করলেন।
প্রমাণ করলেন বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিকাশে তাঁর কোন বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার সততা, নিষ্ঠা, ঐকান্তিকতা, যুক্তিবাদী মানসিকতা, দৃঢ় মনোবল, প্রজ্ঞা ও অসাধারণ নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বিশ^ পরিম-লে অন্যরকম উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং তিনি বিশ্বনন্দিত নেত্রী হিসেবে পরিচিত পেয়েছেন। শেখ হাসিনার অদম্য শক্তি, সাহস, মনোবল ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে দেখে। বাংলাদেশ এখন ৩৫তম অর্থনীতির দেশ, ২০৩০ সাল নাগাদ বিশে^র ২৯তম এবং ২০৫০ সাল নাগাদ ২৩তম অর্থনীতিতে উন্নত দেশে পরিণত হবে।

আর ২০২৬ সালেই বাংলাদেশ ‘মধ্যম আয়ের দেশ’ এবং ২০৪১ সালেই ‘উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে তার বড় প্রমাণ হলো গত কয়েক বছর ধরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বর্তমান মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৬৫ ডলার। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ কয়েকটি দেশের একটি আজ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।

পদ্মা সেতু উদ্বোধন একটি উন্নয়নের মাইলফলক। সফলভাবে কারোনা মহামারি মোকাবেলা, শিক্ষা, যোগাযোগ অবকাঠামো, গ্যাস, বিদ্যুৎ, নারী শিক্ষা, চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা শতভাগ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা, বিনামূল্যে বই বিতরণ, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সামাজিক কর্মসূচির আওতায় পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী, অসহায়, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, তালাকপ্রাপ্ত, স্বামী নিগৃহীত নারী, অটিজম, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা প্রদান, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, নারীর ক্ষমতায়নসহ ও বিভিন্ন সেক্টরের সামগ্রিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকার। একটি দেশের উন্নয়নে বিদ্যুতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। অনবরত বিদ্যুৎ ঘাটতি দেশের ধাবমান উন্নতির চাকাকে মন্থর করে
দিয়েছিলো। অর্থাৎ দেশটিতে দীর্ঘকালের স্থায়ী বিদ্যুৎ সমস্যা, যার কোনো সমাধান পূর্ববর্তী সরকারগুলো দিতে পারেনি- আওয়ামী লীগ সরকার অত্যধিক ব্যয়ে হলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। এ উৎপাদন শুধু গৃহস্থালি কাজেই নয়, বিদ্যুৎনির্ভর অন্যান্য মাধ্যমকেও সচল রেখেছে, যা দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল করেছে।

ইতোমধ্যে কোভিড মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বের অধিকাংশ দেশের চেয়ে বেশি দক্ষতা দেখিয়েছে। কোভিড-১৯ সূচকের ফলাফল বলছে, মহামারি মোকাবিলায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো করেছে বাংলাদেশ। পুরো বিশ্বে এ বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। সেই একই রকম উদ্যমের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী লড়ে যাচ্ছেন ইউক্রেন যুদ্ধের কুফল থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে। প্রধানমন্ত্রী আগেভাগেই কৃচ্ছ্রসাধন এবং কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করেছেন। খাদ্য
নিরাপত্তা জোরদারে যা যা দরকার তাই করছেন। মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে খানিকটা হলেও রেহাই দেওয়ার জন্য সামাজিক সুরক্ষা বলয় আরও সুসংহত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কোটি পরিবারের জন্য সুলভে খাদ্য সরবরাহের কার্ড, খোলাবাজারে খাদ্য বিক্রিসহ
নানামাত্রিক সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। মানতে হবে যে, সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী মহল বৃহত্তর জনচাহিদার প্রতি সময়োচিত সংবেদনশীলতা দেখিয়ে যে উদ্যোগগুলো নিচ্ছে; মাঠ পর্যায়ে সেগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু ব্যবস্থাপনাগত চ্যালেঞ্জ এখনও রয়ে গেছে। দ্রব্যমূল্যেও উর্ধ্বগতি একটু নাজুক অবস্থার সৃষ্টি করেছে, তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কাটিয়ে উঠার।

তবে বঙ্গবন্ধুকন্যা আমাদের নেতৃত্বে রয়েছেন বলে এসব চ্যালেঞ্জ আমরা পর্যায়ক্রমে অতিক্রম করতে পারব বলে বিশ্বাস রাখি। আমাদের সাধ্যমতো উন্নয়ন কর্মসূচি যাতে ঠিকমতো বাস্তবায়ন হয় তার তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। অস্বীকার করার উপায় নেই, বিগত ১৪ বছরে আড়াই কোটি গরিব মানুষ দারিদ্র্যরেখার নিচে থেকে ওপরে উঠে এসেছে। দারিদ্র্য নিরসনের এক রোল মডেলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং অন্তর্ভুক্তিকে যুগপৎ গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। অপরদিকে বেড়েছে সরকারের রাজস্ব আয়ও। প্রায় সর্বত্রই দুর্নীতি অভিযোগ থাকলেও সরকারকে সবচেয়ে স্বস্তি দিয়েছে কৃষিখাত ও তার ব্যবস্থাপনা। আমাদের মতো জনবহুল দেশে সীমিত কৃষিযোগ্য ভূমির সতর্ক ও যৌক্তিক ব্যবহার বাঞ্ছনীয়। আমাদের দেশে সেটা হয়েছে। ফলে আমাদের কৃষিপণ্যের আমদানি নির্ভরতা অনেকাংশেই কমে গেছে। আর এ কৃষি বিপ্লবের কারণেই ১৭ কোটি মানুষের দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা গেছে, যা দেশের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক একটি দিক।

আজকের এই কৃষি বিপ্লবের শতভাগই আওয়ামী লীগের উদ্ভাবন। প্রায় শূন্য হাতেই যাত্রা শুরু হয়েছিল ডিজিটাল বাংলাদেশের।
সময়ের ব্যবধানে আজ তা মহাশূন্যের উচ্চতায় পৌঁছেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এখন বাংলাদেশের মর্যাদার প্রতীক। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কর্মকাণ্ডে লেগেছে ডিজিটালের ছোঁয়া। কলকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে বিশ্বের অনেক দেশকেই পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। ফলে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দেয়া ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এখন স্বপ্ন নয়, প্রকৃত অর্থেই বাস্তবতা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। লক্ষ্য এখন স্মার্ট বাংলাদেশ। এ বছর বাজেট দেয়া হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজটে। বাজেটে প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় রয়েছে।

২০০৮ সালে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৮ লাখ। তখন ব্যান্ডইউথের ব্যবহার ছিল প্রতি সেকেন্ডে ৮ গিগাবাইট (জিবিপিএস)। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিউকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন সাড়ে ১৩ কোটির বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এর মধ্যে মোবাইল ফোনে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি ও ব্রডব্যান্ড ও
পিএসটিএনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছেন প্রায় ১ কোটি। ২০০৮ সালে দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী ছিল প্রায় ৫৬ লাখ। এখন দেশে সক্রিয় মোবাইল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ৬০ লাখ। তখন দেশে ২ জি মোবাইল নেটওয়ার্ক ছিল। আর এখন থ্রিজি, ফোরজির পর চলতি বছরই শুরু হয়েছে ৫জি নেটওয়ার্ক ডিসেম্বওে চলবে বাণিজ্যিকভাবে। ২০০৮ সালে প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডইউথের মূল্য ছিল ৭৮ হাজার টাকা। এখন তা মাত্র ৬০ টাকা। ইনফো সরকার প্রকল্পের ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায়ে ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে দুর্গম ৭৭২ এলাকাকে ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনা হয়েছে। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও এখন ব্যক্তিগত যোগাযোগ থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব কিছুতেই মোবাইল ও কম্পিউটারে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন।

মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট পাঠানোর মধ্য দিয়ে ২০১৮ সালের ১২ মে বাংলাদেশ নতুন এক উচ্চতায় ঠাঁই করে নেয়। যুক্তরাষ্ট্রেও কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়। নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপকারী দেশ হিসেবে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হয় বাংলাদেশ। ২০১৪ সালে রাশিয়ার ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে ভাড়া নেয়া অরবিটাল স্পটে এখন নতুন আরেকটি স্যাটেলাইট স্থাপনের কাজ শুরু করেছে সরকার। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে-১ এ ২৬টি কে-ইউ ব্যান্ড এবং ১৪টি সি ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। দেশের সব অঞ্চল, বঙ্গোপসাগরের জলসীমা, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া এর কভারেজের আওতায় রয়েছে। দেশের টেলিভিশন চ্যানেল ও ডিটিএইচ সেবায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহার করায় বছরে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। এছাড়া হন্ডুরাস, তুরস্ক, ফিলিপাইন, ক্যামেরুন ও দক্ষিণ আফ্রিকার কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলের ট্রান্সপন্ডার ব্যবহার করছে। দেশে পার্বত্য, হাওড় ও চরাঞ্চলে উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা দেয়া হচ্ছে এ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে।

বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মোবাইল নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়লেও বিকল্প হিসেবে কাজ করবে এ স্যাটেলাইট। আমাদের রাজস্ব, বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস তৈরি পোশাক এবং জনশক্তি রফতানি। ব্যক্তি মালিকানায় শুরু হলেও সরকারের আগ্রহেই এ দুই খাত যথেষ্ট গতি অর্জন করেছে। যার ফলে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি গতি পেয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের বেকার সমস্যারও অনেকটা সমাধান হয়েছে। রফতানিযোগ্য এমন সব পণ্য রয়েছে, যা শতভাগ ব্যক্তি উদ্যোগে রফতানি করা যায় না। এক্ষেত্রে সরকারের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। বিদেশী ক্রেতাদের কাছে পোশাক তৈরির কর্মপরিবেশকে
গ্রহণযোগ্য রাখতে সরকার ও মালিকপক্ষের এখনও অনেক কিছু করার রয়েছে। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু থেকে বরাদ্দ বাতিল করলে আওয়ামী লীগ সরকার সেটাকে চ্যালেঞ্জরূপে গ্রহণ করে।

নিজস্ব অর্থায়নে সরকার সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। সেতুটির অস্তিত্বই এখন আমাদের সকলের কাছে মুখ্য। এই সেতু পাল্টে দিচ্ছে আমাদের অর্থনীতি। গত কয়েক বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার অবকাঠামো নির্মাণে ব্রতী হয়েছে। ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, ও মেট্রোরেল ইত্যাদি নির্মাণ করা হয়েছে। ডিসেম্বর থেকে চলছে কাক্সিক্ষত ও স্বপ্নের মেট্রারেল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোভিড-১৯ মহামারি থেকে জীবন বাঁচাতে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ
গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছেন। মার্কিন প্রভাবশালী ফোর্বস ম্যাগাজিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন উদ্যোগের প্রশংসা করেছে। এর অনুসরণ করে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামও প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার প্রশংসা করেছে।

একটানা বেশি সময় দেশ শাসনের সুযোগ পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন। তার স্বীকৃতি জাতিসংঘের এই এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার ২০২১। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন অনেক স্বীকৃতি তিনি পেয়েছেন। এর আগে কমনওয়েলথভুক্ত দেশের সরকার প্রধানদের মধ্যে অন্যতম সফল এবং অনুকরণীয় তিনজন নারী সরকার প্রধানের একজন নির্বাচিত হয়েছেন আমাদের দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তা প্রধানমন্ত্রী কঠোর পরিশ্রম ও মেধা-মনন দিয়ে বাস্তবায়িত
করে যাচ্ছেন এক নাগাড়ে। বিশ^নেত্রীর হাত ধরেই এই দেশ সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার মতো ঝকঝকে উন্নত দেশে রূপান্তরিত
হবে অল্প সময়েই। একমাত্র শেখ হাসিনাই পারবেন উন্নত, সমৃদ্ধ ও শান্তিময় বাঙালী জাতি ও বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। সন্তানের থেকে বেশি মমতায় ভালোবেসেছেন দেশকে। পিতার অসমাপ্ত কাজ যে সমাপ্ত করতে হবে। নির্মাণ করতে হবে একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক আর ভবিষ্যতের আধুনিক বাংলাদেশ। এটি বর্তমান প্রজন্মেরও প্রত্যাশা।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক