রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও পাবনাবাসীর নাগরিক সংবর্ধনা – এবাদত আলী

রাষ্ট্রপতি  মো. সাহাবুদ্দিন  ও পাবনাবাসীর নাগরিক সংবর্ধনা – এবাদত আলী

পর্ব-২
বাংলাদেশের নব-নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি পাবনার কৃতি সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর আগমণকে কেন্দ্র করে গোটা পাবনা শহরকে নিরাপত্তার কঠিন চাদরে ঢেকে ফেলা হয়। সত্য কথা বলতে কি পাবনাবাসী এমন দৃশ্য আর কোনদিন অবলোকন করেনি। তাই বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার ভাষায় বলতে হয় “না জানি কেনরে এতদিন পরে জাগিয়া উঠিল প্রাণ”।

এ ব্যাপারে পাবনার জেলা প্রশাসক রাসেল হোসেন বিশ্বাস, পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী ও তাদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারিগণও রাতদিন নিরলস পরিশ্রম করতে থাকেন।

নব নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৫মে-২০২৩ ঢাকার বঙ্গভবন থেকে রওনা হয়ে হেলিকপ্টার যোগে পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন ষ্টেডিয়ামে নেমে পাবনা সার্কিট হাউজে যাবেন। সেখান থেকে যে যে স্থান দিয়ে তিনি যাতায়াত করবেন সেই সব জায়গার রাস্তা-পথ নতুন করে আস্তর ও রঙ-চঙ করা হয়। ভরাট করা হয় এতদিনের অবহেলিত এবড়ো থেবড়ো পথ গুলো। রঙের পরশ পড়ে ডিভাইডার গুলোতে। প্রধান প্রধান সড়ক রাতারাতি হয়ে ওঠে ছিম ছাম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। সে এক এলাহি কারবার। রাষ্ট্রপতির চার দিনের পাবনা সফরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিলো ১৬ মে বিকালে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে তাকে নাগরিক সংবর্ধনা প্রদান। রাষ্ট্রপতির আগমণে নাগরিক সংবর্ধনা কমিটি একটি স্মরণিকা প্রকাশ করে। পাবনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সিনসা পত্রিকার প্রথম পাতায় সাংবাদিক ও কলামিস্ট এবাদত আলী কর্তকৃ পাবনাবাসীর দাবী সম্বলিত একটি নিবন্ধ সবার নজর কাড়ে। অন্যান্য স্থানীয় পত্রিকাগুলো এদিন বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ মাঠের সুসজ্জিত বিশাল অস্থায়ী মে অনুষ্ঠান শুরুর বেশ কিছু আগে বিশিস্ট বাউল সঙ্গীত শিল্পী শফি মন্ডল পর পর কয়েকটি লালন সঙ্গীত পরিবেশন করে দর্শক শ্রোতাদেরকে মাতিয়ে রাখেন।

বহু প্রতিক্ষার পর পাবনার সর্বস্তরের মানুষের নিকট অবশেষে নির্ধারিত তারিখ ও সময় উপস্থিত কবি গুরুর ভাষায় ‘‘ ওই মহামানব আসে/ দিকে দিকে রোমা লাগে/ মর্তের ধুলির ঘাসে ঘাসে, / সুর লোকে বেজে উঠে শঙ্ক/ নর লোকে বাজে জয় ডঙ্ক”। সেই মাহেন্দ্রক্ষণে একটানা ২০/২২ দিন অনাবৃষ্টিতে উত্তপ্ত আবহাওয়ায় ২রা জৈষ্ঠের আম পাকানো গরমের মধ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু তার অতীত স্মৃতি বিজোড়িত পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠের স্মরণকালের সৌন্দর্যমন্ডিত সর্ব বৃহৎ সুসজ্জিত বিশাল উন্মুক্ত মে উপস্থিত হয়ে হাত নেড়ে মাথা ঝাঁকিয়ে মিষ্টি হেসে আবেগে আপ্লুত হয়ে মে উপবিষ্ট, অতিথি গ্যালারিসহ উপস্থিত সকল দর্শক শ্রোতাদেরকে অভিবাদন ও অভিনন্দন জানালেন। তার সঙ্গে ছিলেন তার সহধর্মীনী ফাষ্ট লেডি ড. রেবেকা সুলতানা। রাষ্ট্রপতির আগমণে গোটা কলেজ মাঠে জয় বাংলা জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে আকাশ প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এর পর পরই পরিবেশিত হলো জাতীয় সঙ্গীত আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি….।

চিরাচরিত প্রথানুযায়ী অনুষ্ঠানে সভাপতি, আমন্ত্রিত অতিথিসহ ও অন্যন্যদের আসন গ্রহণ, ফুলেল শুভেচ্ছা, ক্রেষ্ট প্রদান অনুষ্ঠানের পর পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতসহ অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠান্তে পাবনার বিশিস্ট ব্যবসায়ী পাবনা ডায়াবেটিক সমতিরি সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বেবী ইসলামের সভাপতিত্বে হাবিবুল্লা বাহার ও মারুফা মঞ্জুরী খান সৌমী কর্তৃক সাবলিল কন্ঠে উপস্থাপনার মাধ্যমে আয়োজকদের বক্তৃতার পালা। নাগরিক কমিটির আহবায়ক মাছরাঙা টেলিভিশনের চেয়ারম্যান, এটকো সভাপতি স্কয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু, যুগ্ম আহবায়ক পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ প্রফেসর শিবজিত নাগ, পাবনা সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও প্রবীন সাংবাদিক আব্দুল মতীন খান, পাবনা – ১ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, পাবনা – ৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স, পাবনা – ৪ আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান বিশ্বাস, পাবনা – ৩ আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন, পাবনা – ২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির, নারী সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন ও প্রফেসর ড. আব্দুল আলীম প্রমুখ।

বক্তাগণ পাবনার গণমানুষের পক্ষে বেশ কয়েকটি অতি গুরুত্বপুর্ণ দাবী-দাওয়া তুলে ধরেন। দাবীগুলোর মধ্যে পাবনা হতে সরাসরি ঢাকার সঙ্গে রেল যেগাযোগ স্থাপন, পাবনার শহরের এককালের শোভাবর্ধনকারী খরস্রোতা নদী ইছামতি আজ মরা ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এই ঐতিহ্যবাহী ইছামতি নদী পুনঃখননের মাধ্যমে বারোমাস পানি প্রবাহের ব্যবস্থাপুর্বক বহতা নদীতে পরিণত করে তার দুইপাড়ে ওয়াকওয়ে তৈরি করে পাবনা শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা। পাবনা- ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ওয়াই টাইপ পদ্মা সেতু নির্মণ করা। পাবনা মেডিকেল কলেজকে পুর্নাঙ্গ ৫ শ শয্যার পুর্নাঙ্গ হাসপাতালে পরিণত করা। ঈশ্বরদী বিমান বন্দরটি পুণরায় চালু করা। পাবনা কেলিকো কটন মিলটি চালু করে শত শত শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। পাবনাতে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করাসহ পাবনার সার্বিক উন্নয়ন সাধন করা ইত্যাদি।

(চলবে…)।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট