মহামান্য রাষ্ট্রপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিনের নিকট পাবনাবাসীর প্রত্যাশা সমুহ – এবাদত আলী
বাংলার ভ্যাগ্যাকাশে দ্যুতি ছড়ানো ধ্রুবতারা, সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লক্ষভেদি দিক নির্দেশনার সারথি। ছাত্রাবস্থায় ১৯৬৬ সাল হতে ৬ দফাসহ বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন সংগ্রামের অগ্রপথিক এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত ৬৯- ৭০ এর গণ আন্দোলনও গণঅভ্যুত্থানের পাবনা জেলার অকুতোভয় অগ্রজ সৈনিক।
১৯৭১ সালে বাংলার স্বাধীকার আন্দোলনে যখন উত্তাল পুর্ব বাংলা তখন তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্র এবং সেসময় যিনি স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পাবনা জেলার বিপ্লবী সভাপতি। বঙ্গবন্ধুর আহবানে সমগ্র পুর্ব পাকিস্তানে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে ২৩ মার্চ ১৯৭১ পাবনাতে ব্যাপক মহড়া গণমিছিল ও বিশাল জমায়েত অনুষ্ঠিত হয়। পাবনার সিংহপুরুষ রফিকুল ইসলাম বকুল, জহুরুল ইসলাম বিশু, মো: ইকবালসহ সংগ্রামি ছাত্রনেতার সমন্বয়ে যিনি পাকিস্তানি পতাকা পুড়িয়ে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন কারি।
যিনি প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র ভারত থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা। যিনিি বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর অথাৎ ১৯৭২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি এক মহেন্দ্রক্ষণে পাবনার নগরবাড়িতে স্বাধীন বাংলার মহামান্য রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুজিব বাঁধের উদ্বোধনকালে উক্ত অনুষ্ঠানে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে স্বাগত বক্তৃতা দানকারি সাহসি যুবক। তার বক্তৃতায় মুগ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধু তাকে কাছে টেনে নিয়ে বলেন ‘‘ তুই তো ভালোই বলিস’’। বঙ্গবন্ধু সেসময় যাকে বক্ষবন্ধনে আবদ্ধ করে হেলিকপ্টারে করে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা নিয়ে যান।
সুদীর্ঘ ৫১ বছর পর সেদিনের সেই দেশপ্রেমিক ও সাহসি যুবক পাবনার গণমানুষের নেতাই আজ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ২২ তম রাষ্ট্রপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিন। যা পাবনা জেলার জন্মলগ্ন থেকে ১শ ৯৫ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোন রাষ্ট্রপতির পদ অলংকৃত করা।
যিনি ২৯ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই পাবনাবাসির ভবিষ্যতের আশা-আকাংখ্যার প্রতিক। যিনি ১৯৪৯ সনে পাবনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং হাটি হাটি পা পা করে পাবনা শহরেই বেড়ে ওঠেন।
শিক্ষা ক্ষেত্রে পাবনা শহরের গান্ধি বিদ্যালয়ে যার হাতে খড়ি এবং পরবর্তীকালে পাবনা রাধানগর মজুমদার অ্যাকাডেমি বা পাবনা আর এম অ্যাকাডেমি ও ঐতিহ্যবাহি পাবনা অ্যাডওয়ার্ড কলেজের ছাত্র। স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭৪ সালে তিনি পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করার পর তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে তৎকালিন সামরিক সরকার তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করে।
দীর্ঘদিন কারা ভোগের পর তিনি কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ঐতিহ্যবাহী পাবনা প্রেসক্লাবেরও আজীবন সদস্য।
তিনি পাবনা শহীদ আমিন উদ্দিন আইন কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করে বিসিএস এ উত্তিীর্ণ হয়ে জজ হিসেবে চাকুরিতে যোগ দেন। চাকুরি হতে অবসর গ্রহণের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বাসভাজন এই ব্যক্তিকে তিনি দুদুকের কমিশনার নিযুক্ত করেন।
পরবর্তীকালে তাকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য এবং এবং বাংলাদেশ আওয়মী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
তিনি যখন একটি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তখন পাবনার মানুষকে অধিক ভালোবেসে সবাইকে অবাক করে দিয়ে এহেন সৎ, নিষ্ঠাবান, ত্যাগি, সদালাপি, নির্লোভ, নিরহংকারি, অতি সহনশীল ও নানাবিধ ক্ষেত্রে বিচক্ষণ ব্যক্তিকেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে যোগ্য বিবেচিত করে রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার নাম প্রস্তাব করেন এবং তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় বাংলাদেশের ২২ তম রাষ্ট্রপতি নির্বাাচিত হন এবং গত ২৪ এপ্রিল-২০২৩ রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তিনি এখন রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয় আলোকিত।
সেই রাষ্ট্রপতি পাবনার কৃতি সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিন মহোদয় দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর সরকারি সফরে পাবনায় আগমন করায় পাবনাবাসি যেন আনন্দের জোয়ারে ভাসছে। পাশাপাশি তার কাছে প্রত্যাশার একটি ডালি সাজিয়ে তার সমীপে উপস্থাপন করেছে।
তাহলো মহামান্য রাষ্ট্রপতির শৈশব ও কৈশরের স্মৃতি বিজোড়িত বিদ্যাপীঠ পাবনা রাধানগর মজুমদার একাডেমি বা আর এম একাডেমি সরকারি করণ, পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজকে পুর্নাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপদান করা। পাবনায় প্রায় ৪০ একর জায়গা নিয়ে ক্যালিকো কটন মিল নামে একটি মিল চালু করা হয় এবং হাজারো শ্রমিকের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা হয়। কিন্তু ১৯৯৩ সালে মিলটি বন্ধ হয়ে যায়। উক্ত কটন মিলটিকে পুনরায় চালু করে শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
পাবনার একসময়ের খরস্রোতা ইছামতি নদী পুনঃখনন পুর্বক দু পাড় ঘেঁষে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করে পাবনা শহরবাসির যানজট নিরসন তথা শহরের শ্রীবৃদ্ধি করা। পাবনায় একটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা।
পাবানা মেডিকেল কলেজকে পুর্নাঙ্গ মেডিকেলে রুপান্তর করা। পাবনা -ঢালারচর রেললাইনকে সম্প্রসারণ পুর্বক সরাসরি ঢাকার সঙ্গে যুক্ত করা। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষে আরিচা -কাজিরহাট দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা।
পাবনা সদরের টেবুনিয়া কৃষিফার্ম এলাকায়‘ বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুদ্দিন কৃষি কলেজ’ নামে একটি কৃষি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা। ঈশ্বরদী বিমান বন্দরটি পুনরায় চালু করা। পাবনা প্রেসক্লাবের নিজস্ব ভবনের ব্যবস্থা করাসহ মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট পাবনার সার্বিক উন্নয়নই পাবনাবাসীর প্রত্যাশা।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট