মেডিকেলে চান্স, দুশ্চিন্তায় পরিবার

মেডিকেলে চান্স, দুশ্চিন্তায় পরিবার

ভাঙ্গুড়া প্রতিনিধি : ক্ষুদ্র দোকানী বাবা অধীর ঘোষের ছেলে উৎস ঘোষ। এক টুকরো বসত ভিটা ছাড়া কোন সম্পদ নেই। বাবার সামান্য আয়ে অভাব অনটনের মধ্যে চলে সংসার। বড় ছেলে অভিজিৎ ঘোষ বেগম রোকেয়া ইউনিভার্সিটিতে ত্রিপলি বিভাগের ছাত্র। অভিজিৎ ঘোষ টিউশনি করে নিজের ও ছোট ভাই উৎসব ঘোষের পড়ালেখার খরচের যোগান দিতেন। এবছর উৎস মাগুরা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এখন মেডিকেলে পড়ালেখার খরচের যোগান নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বাবা অধীর ঘোষ। এমনকি ভর্তির জন্য যে টাকা লাগবে, সেটিও জোগাড়ের জন্য বিভিন্ন জনের কাছে হাত পাততে হচ্ছে তাকে। অধীর ঘোষ পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের চরভাঙ্গুড়া গ্রামের হিন্দুর পাড়ার বাসিন্দা। অধীর ঘোষ ভাঙ্গুড়া পৌরশহরের শরৎনগর বাজারে টিনশেড টং ঘর ভাড়া নিয়ে পলিথিন বিক্রির দোকান করেছে।

জানা যায়, দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট উৎস ঘোষ ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী। সে গ্রামের পাশে উপজেলা পরিষদের সেবাব্রতি বিদ্যালয় থেকে সাধারণ গ্রেডে পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি পায়। পরে উপজেলা সদরের মমতাজ মোস্তফা আইডিয়াল স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণীতে ট্যালেন্টফুলে বৃত্তি পায়। মাধ্যমিকে পড়াশোনার সময় উৎস টিউশনি করিয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ যুগিয়েছে। এরপর জিপিএ 5 পেয়ে এসএসসি পাস করে বড় ভাইয়ের সহযোগিতা পেতে উৎস রংপুর কারমাইকেল কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয়। সেখানে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় ভাই অভিজিৎ ঘোষের রুমে থেকে পড়াশোনা করতো। কলেজ পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য উৎস একটি ফাউন্ডেশন থেকে মেধাবৃত্তি পেতো। এছাড়া বড় ভাই অভিজিৎ টিউশনি করে নিজের ও ছোট ভাইয়ের পড়াশোনা খরচ যোগাড় করতেন। এইচএসসি পাস করার পরে ঢাকার একটি কোচিং সেন্টার গত চার মাস বিনামূল্যে মেধাবী উৎসকে কোচিং করান।

উৎসের বাবা অধীর ঘোষ জানান, তিন ছেলে-মেয়ে অত্যন্ত মেধাবী। তবে অর্থের অভাবে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেই। আমার টানাটানির সংসার। তাই ছোট ছেলেকেও বড় ছেলের কাছে রাখতে মাইকেল কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি করি। ছেলেদেরকে পড়াশোনার খরচ দিতে পারিনা। বড় ছেলে অনেক কষ্ট করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালায় ও ছোট ছেলেকে সহযোগিতা করে। কিন্তু এখন মেডিকেলে ভর্তি এবং পড়াশোনার জন্য এত টাকা জোগাড় করব কিভাবে? এ নিয়ে গত দুইদিন ধরে মানুষের কাছে ধার দেনা চাচ্ছি।

উৎসের শিক্ষক হাফিজুর রহমান বলেন, উৎস একজন ট্যালেন্টেড স্টুডেন্ট। তাকে আর্থিক সাপোর্ট দিতে পারলে ভবিষ্যতে অনেক ভালো করবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বলেন, দারিদ্রতাকে জয় করে উৎসের এমন অর্জনে উপজেলা প্রশাসন আনন্দিত। উৎসের মেডিকেলে ভর্তি সহ পড়াশোনার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন থেকে সহযোগিতা করা হবে।