বনওয়ারীনগর মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন

বনওয়ারীনগর মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন

পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার ফরিদপুর উপজেলার বনওয়ারীনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গৌরব ও ঐতিহ্যের শতবর্ষ উদযাপন করা হয়েছে।

এ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা, কৃতি প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ক্রেস্ট প্রদান, আলেচনা সভা, স্মৃতিচারণ ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও আনন্দ শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন পাবনা-৩ ( চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর) আসনের সংসদ সদস্য, ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ মকবুল হোসেন।

বনওয়ারীনগর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি এডভোকেট এসএম জামিউল এহসান জিন্নাহর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মকবুল হোসেন বলেন, দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বর্ণাঢ্য ইতিহাস ও ১৪ বছর টানা দেশ পরিচালনায় শেখ হাসিনার কর্মময় সময় ও তার সংগ্রামী জীবনের ইতিহাস শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রবেশ করাতে হবে। তাহলে এ দেশে আর কোন কুলাঙ্গাররা মানূষদের বিপথগামী করতে পারবে না। তিনি বলেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার আলো ছড়ানোর সূতিকাগার প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার জন্য শিক্ষার পাশাপাশি সামাজিক, রাজনৈতিক ও পারিপার্শ্বিক ইতিহাস জানিয়ে, শিখিয়ে ও জ্ঞান দিয়ে তাদের ছোট থেকেই যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পাবনা-সিরাজগঞ্জ সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি। তার বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনককে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। তারই যোগ্য উত্তরসূরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। যা কুচক্রীরা অব্যাহত রেখেছে। তিনি দলীয় নেতাকর্মীসহ সচেতন মহলের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, আপনার চোখ কান খোলা রাখবেন। সামনে নির্বাচন। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন মহাযজ্ঞের বাস্তব চিত্র জনগণের মধ্যে তুলে ধরে উন্নয়নের ধারা অব্যাহতসহ অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করতে আবারও স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি নৌকা প্রতীককে ভোট দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ দানে ভোট প্রার্থনা করেন।

ফরিদপুর উপজেলা বন কর্মকর্তা শফিউজ্জামান মর্তুজার পরিচালনায় অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য দেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর রাজশাহীর উপপরিচালক শেখ মো: রায়হান উদ্দিন, ফরিদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক গোলাম হোসেন গোলাপ, পৌরসভার মেয়র খ ম কামরুজ্জামান মাজেদ, প্রাক্তন ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক দেবাশীষ কুমার কুন্ডু, প্রাক্তন ছাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নের মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম তাজ, প্রাক্তন শিক্ষার্থী আমেরিকা প্রবাসী আফরোজা বুলবুল পলি, বিশিষ্ট চিকিৎসক সমর্পিতা ঘোষ তানিয়া, ফরিদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি খলিলুর রহমান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম কুদ্দুস, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাছরিন পারভীন মুক্তি, উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল ছালেক ও ইউআরসির ইন্সট্রাক্টর ময়নুল হক। অনুষ্ঠানে দেশবিদেশ থেকে ছুটে আসেন নানা শ্রেনিপেশার মানুষ।

উল্লেখ্য, রাজর্ষী রায় বনমালী রায় বাহাদুর ফরিদপুর থানায় নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য তার পত্মীর নামে রানী সরোজ মহিনী বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। বিদ্যালয়টি বেশ কিছুদিন পরে বন্ধ হয়ে যায়। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে উক্ত প্রতিষ্ঠানটি বনওয়ারীনগর ফ্রি প্রাইমারী স্কুল হিসেবে চালু হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে ১৬ সেপ্টেম্বর সরকারী বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিদ্যালয়টিকে বনওয়ারীনগর প্রাইমারী স্কুল নামকরণ করা হয়। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষানীতির ফলস্বরূপ এ বিদ্যালয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিণত হয়। বর্তমানে উক্ত বিদ্যালয় বনওয়ারীনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত। বিদ্যালয়ে বহু গুণী ও পন্ডিত ব্যক্তিত্ব পাঠদান বা শিক্ষকতায় অংশগ্রহণ করেন। ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে এই বিদ্যালয় জেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করে।