বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছার জম্মদিন পালন পাবিপ্রবিতে
নিজস্ব প্রতিনিধি : যথাযোগ্য মর্যাদা ও শ্রদ্ধায় আজ মঙ্গলবার বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯৩তম জম্মদিন পালন করেছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সকালে প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুনের নেতৃত্বে জম্মদিনের র্যালি বের হয়। র্যালি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জম্মশতবর্ষের স্মারক ম্যুরাল জনক জ্যোতির্ময়ের পাদদেশে বঙ্গমাতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন. উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম মোস্তফা কামাল খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সালাহ উদ্দীন। আরও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বঙ্গবন্ধু পরিষদ।
এরপর গ্যালারী-২ তে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯৩তম জম্মবার্ষিকীর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুনের সভাপতিত্বে ড. হাবিবুল্লাহ’র সঞ্চালনায় এতে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রবীণ শিক্ষক অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ৪৫ বছরের জীবনের ৪২ বছর বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন। তাঁর অনুপ্রেরণা, উৎসাহ, রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কারণে শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু হয়ে জাতির পিতা হয়েছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে বঙ্গমাতার ত্যাগ, দূরদর্শীতা সর্বোপরি অবদান অবিস্মরণীয়। জেলখানা থেকে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বা চিরকুট এনে কর্মীদের কাছে পৌঁছে দিতেন। চরম রাজনৈতিক সংকটময় মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর নির্ভরতা ছিলেন বঙ্গমাতা। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক বিকাশে বঙ্গমাতা ছিলেন প্রধানতম। বঙ্গবন্ধুর সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে ওঠে আসে বঙ্গমাতার নাম।
প্রধান আলোচক আরও বলেন, বঙ্গমাতা এতটাই দূরদর্শী ছিলেন যে জেলখানায় বঙ্গবন্ধুর কাছে কাগজ কলম দিয়ে বলেছিলেন স্মৃতিকথা লিখতে। সেই স্মৃতিকথায় আমরা বঙ্গবন্ধুকে যেমন পাই তেমনি বঙ্গমাতার অবদান সর্বোপরি বাংলাদেশকে জানতে পেরেছি নতুনভাবে বইগুলো প্রকাশের পর। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ সারাবিশে^ সমাদৃত হয়েছিল বঙ্গমাতার পরামর্শে ভাষণ দেওয়ার কারণেই। মা হিসেবে তার জীবন সাফল্যে ভরপুর। তিনি সন্তানদের মানুষ করেছেন বিকশিত করেছেন চিরায়ত বাঙালি মা হিসেবে। বঙ্গবন্ধুকে চর্চা করার পাশাপাশি বঙ্গমাতাকেও চর্চা করতে হবে, অনুধাবন করতে হবে।
আলোচক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হোতারাই ১৭ আগস্ট, ২১ আগস্টের সঙ্গে জড়িত। এই চক্ররা অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধ্বংস করে বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চায়। কিন্তু আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।
অন্য আলোচক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সালাহ উদ্দীন বলেন, টুঙ্গিপাড়ার খোকা থেকে জাতির পিতা হওয়ার পিছনে মূল ভূমিকা পালন করেছেন বঙ্গমাতা। ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন বঙ্গমাতা। বাংলাদেশের সৃষ্টির পিছনে তাঁর ত্যাগের বিষয়টি গবেষণা হওয়া দরকার।
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন বলেন, বঙ্গবন্ধু বাঙালি আর বাংলাদেশকে অন্তর থেকে ভালোবেসেছিলেন, পাশে নির্ভরতা, সহচর, সহযোদ্ধা হিসেবে পেয়েছিলেন বঙ্গমাতাকে। স্বামীর মতো তিনিও বাঙালি আর বাংলাদেশকে ভালোবেসেছিলেন, বুকে ধারণ করেছিলেন বাংলাকে। তাই স্বামীর প্রধান অনুপ্রেরণাদাতা, পরমার্শদাতা ও নির্ভরতার আশ্রয়স্থল ছিলেন। বঙ্গমাতা ছিলেন সাধারণ বাঙালি মায়ের মতো। কিন্তু অন্যায়ের বিপক্ষে কঠোর। জাতির পিতার সংকটের সঙ্গী হয়ে, জীবনের চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছিলেন। নির্লোভ মহীয়সী বঙ্গমাতার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার বঙ্গবন্ধুর পক্ষে অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়েছিল। যার কারণে শেখ মুজিবের বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠা ও বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের অর্জনে বঙ্গমাতার অবদান চির জাগ্রত হয়ে থাকবে। আমরা তাঁর আদর্শকে ধারণ ও অনুকরণ করে ব্যক্তিগত, সামাজিক, প্রতিষ্ঠান ও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
এদিকে বঙ্গমাতার জম্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব মিলনায়তেন শুরু হয়েছে বঙ্গমাতার বিভিন্ন ছবি নিয়ে চারদিনব্যাপী প্রদর্শনী। প্রদর্শনী সবার জন্য উম্মুক্ত থাকবে।