সেচ ক্যানেল  ও  পাকা সড়ক পাল্টে গেছে ১০ গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা

সেচ ক্যানেল  ও  পাকা সড়ক পাল্টে গেছে ১০ গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা

নিজস্ব প্রতিনিধি  : এক সময় ‘একটি সড়কের অভাবে ১০ গ্রামের কমপক্ষে শতাধিক অন্তঃস্বত্তা নারীকে ডেলিভারি করাতে হাসপাতালে নিতে না পারায় জীবন হারিয়েছেন শত শত নারী ও শিশু। সড়ক না থাকায় ছেলে মেয়েরা ঠিকমতো স্কুল কলেজ করতে পারতো না। কৃষক জলাবদ্ধতার কারণে না পারতো ফসল ফলাতে। পেতো ন্যায় ফসলের ভালা দাম।

হাসপাতাল, অফিস-আদালত বা স্কুল কলেজে এই গ্রামগুলো থেকে  কেউ গেলে অন্যগ্রামের ব্যক্তিরা বলে দিতেন এরা লোহাগড়া বিল এলাকা থেকে এসেছেন। আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন পাবনা সদর উপজেলার আতাইকুলা থানার সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস মুন্সী। তিনি বলেন, বিএডিসির পানাসি প্রকল্পের অধীনে এই অঞ্চলের ১০ গ্রামের মানুষ লোহাগড়া বিলের মধ্যে একটি রাস্তা আর সেচ ক্যানেল পুনঃখনন করায় বেশ আনন্দিত। ফলে বিলের মধ্যে গ্রামীণ ঢালাই সড়ক পাল্টে দিয়েছে জীবনযাত্রার মান। সেচ ক্যানেল এনেছে আর্থসামাজিক উন্নয়ন।

বিএডিসি’র পাবনা কার্যালয় থেকে জানা যায়, পাবনা সদরের সাদুল্লাহপুর নায়েব মাস্টারের বাড়ী থেকে সাদুল্লাহপুর বসু মাস্টারের জমি পর্যন্ত ৩.৯৬ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করা হয়েছে। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ লাখ টাকা। পাবনা-নাটোর-সিরাজগঞ্জ জেলায় ভূউপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ প্রকল্প উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কাজটি বাস্তবায়ন করেছে পাবনা বিএডিসি সেচ বিভাগ। অন্যদিকে সাদুল্লাহপুর লোহাগড়া হোসেন আলী খার বাড়ীর তেমাথা হতে চক বায়শা (আতাইকুলা-সুজানগর) আরএইচডি পর্যন্ত ৪.১৭ কিলোমিটার আরসিসি গোপাট সড়ক। এই প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৩ কোটি ৩৩ লাখ ১৩ হাজার ৪১৮ টাকা।

পানাসি প্রকল্প সুত্র জানায়, চলতি মাসের ১২ জুন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স এই সেচ ক্যানেল ও আরসিসি গোপাট সড়কের উদ্বোধন করেন।

লোহাগড়া গ্রামের কৃষক তালেব শেখ বলেন, লুঙ্গি মালকাছা দিয়েও এই সড়কে যাতায়াত করা যেতো না। কিন্তু রাস্তা হওয়ায় আমরা দারুণ খুশি। আমরা বেশ উপকৃত। আমাদের কৃষি পণ্য খুব সহজে বাজারে নিয়ে যেতে পারি। ন্যায্য মূল্য পাচ্ছি। ছেলেমেয়েরা স্কুল কলেজ ও অফিস আদালত করতে পারছে।

চমরপুর গ্রামের ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, এই রাস্তা হওয়ায় কমপক্ষে ১২/১৫ হাজার মানুষের যাতায়াতের সুবিধা হয়েছে। এক ও দুই ফসলী জমি হয়েছে তিন ফসলি। ক্যানেলে পানি থাকলে ধান-পাট চৈতালি হয়। আর পানি নেমে গেলে পেঁয়াজ রসুন আবাদ হয়।

দড়ি শ্রীকোল গ্রামের ভ্যান চালক সেলিম হোসেন বলেন, আগে লোহাগড়া থেকে আতাইকুলা বাজারে যেতে ২৫/৩০ মিনিট লাগতো। এই রাস্তা হওয়ায় এখন ১২/১৫ মিনিট লাগে। এতে সময় অপচল কম হয়। টিপ বেশি পাই। মানুষও সঠিক সময়ে তাদের নির্ধারিত কাজে যেতে পারেন।

ইঞ্জিন চালিত করিমন চালক শাহীন প্রামানিক বলেন, একজন গুরুতর অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নেয়ার উপায় ছিলো না। রাস্তাটা হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ অনেক উপকৃত হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, সড়ক ও ক্যানেল নির্মাণ হওয়ায় চোমড়পুর, লোহাগাড়া, স্বরুপপুর, শ্রীকোল, দড়ি শ্রীকোল, হাপানিয়া, লক্ষ্মীকোল, চরপাড়া ও চর হাপানিয়া এই ১০ গ্রামের মানুষের সার্বিক জীবনযাত্রায় আর্থসামাজিক আমুল পরিবর্তন এসেছে। তারা বলেন, দীর্ঘদিন পর হলেও পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স যে কাজটি করে দিয়েছেন তা এ এলাকার মানুষ স্মরণে রাখবেন।

সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস  মুন্সী বলেন, এই এলাকার কোন মানুষ হাসপাতাল, থানা বা সরকারি অফিসে গেলে কর্তারা বুঝে যেতো তারা লোহাগাড়া গ্রাম থেকে এসেছে। কারন পায়ে হেটে কাদামাটি খচে এ এলাকার মানুষ গ্রাম থেকে শহরে যায়। তিনি বলেন, এই সেচ ক্যানেল হওয়ায় ৩ হাজার কৃষক উপকৃত। প্রায় ২০ হাজার মানুষ যাতায়াতসহ নানা ভাবে উপকৃত হচ্ছেন।

বিএডিসি পাবনা কার্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, বর্ষা মওসুমে এই বিলের কয়েক হাজার একর জমি পানিতে তলিয়ে থাকতো। কৃষক কৃষি জমিতে এক ফসল চাষ করতো। কোন জমিতে চাষই হতো না। বিএডিসি এই অঞ্চল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে। তারই ধারাবাহিকতায় লোহাগড়া বিলের পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়া সেচ খাল পুনঃখনন করা হয়েছে। সেই সাথে বিলের ভিতর দিয়ে তৈরী করা হয়েছে আরসিসি গোপাট সড়ক। তিনি বলেন, সড়ক ও সেচ ক্যানেল তৈরী করায় মানুষের যাতায়াত, ফসল উৎপাদন এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে। গ্রামগুলোর মানুষ বেশ উপকৃত ও সরকারের উদ্দেশ্য সফল হবে বলে মনে করি।