বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারি সাংবাদিক ও কলামিস্ট এবাদত আলী

বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারি সাংবাদিক ও কলামিস্ট এবাদত আলী

বৃহত্তর পাবনা জেলায় উল্লেখযোগ্য প্রবীন সাংবাদিক ও কলামিস্টদের মধ্যে যাদের নাম খ্যাতির শীর্ষে তাদের মধ্যে সাংবাদিক ও কলামিস্ট এবাদত আলী সমধিক পরিচিত। শব্দ চয়নে প্রাঞ্জল ভাষার ব্যবহার, সাধারণের পাঠযোগ্য, সরল ও সহজিয়া কায়দায় ভাব প্রকাশে সিদ্ধ হস্ত হলেন সাংবাদিক ও কলামিস্ট এবাদত আলী। যার লেখা পড়ে যে কোন ধরনের পাঠক অতি সহজেই তা হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম।

বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারি এই প্রথিতযশা সাংবাদিক ও কলামিস্ট এবাদত আলী ১৯৫১ সালের ১৮ জানুয়ারি পাবনা সদর থানার মালিগাছা ইউনিয়নের বাঙ্গাবাড়িয়া-বাদলপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ওয়ালি উল্লাহ এবং মাতার নাম খতেজান নেছা। বাল্যকালে তিনি জোতআদম প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বাঙ্গাবাড়িয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসায় লেখাপড়া করেন। পরবর্তীকালে পাবনা শহরের রাধানগর মজুমদার একাডেমি বা আরএম একাডেমিতে ভর্তি হন। তথায় নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে উক্ত বিদ্যালয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় জি এস নির্বাচিত হন এবং একাডেমির বার্ষিকী সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৬-৬৭ শিক্ষা বর্ষে তার সম্পাদনায় সর্বপ্রথম আর এম একাডেমি বার্ষিকী প্রকাশিত হয়।
তিনি ১৯৬৬ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে মানবিক বিভাগে প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। ১৯৬৭ সালে তার সহ-সম্পাদনায় পাবনা থেকে ‘‘দিগন্তিকা’’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। যার একটি সংখ্যায় জাতীয় পুরুস্কারপ্রাপ্ত শিশুতোষ কবি বন্দে আলী মিয়া লিখেছিলেন-‘‘ নব দিগন্তের নতুন পথিক তোমার দিগন্তিকা/ খ্যাতির মাল্য কন্ঠে পরাবে ভালে দিবে জয় টিকা’’।

তিনি পাবনা সদর থানার গোপালপুরে জায়গির থেকে লেখা-পড়া করার সময় তার উদ্যোগে ১৯৬৭-৬৮ সালে বাহাদুরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে (যা আজ বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।) এবং তিনি তথায় অবৈতনিক প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক হিসেবে বেশ কিছু দিন দায়িত্ব পালন করেন। সেই সময় বাহাদুরপুর ‘‘আলোক সমিতি’’ গঠিত হলে তাকে সেক্রেটারির দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৬৭ সালে ‘‘রাধানগর ধ্রুবতারা সংঘ’’ গঠিত হলে তিনি সাধারণ সম্পাদকের পদ লাভ করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি এইচ এস সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাংলা অনার্সসহ বিএতে ভর্তি হন। এবছর তিনি পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্রসংসদ নির্বাচনে পুর্ব-পাকিস্তান ছাত্র লীগের প্যানেলে বার্ষিকী সম্পাদক হিসেবে প্রার্থী হন। কলেজের বার্ষিক সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় একাধিকবার তিনি পুরুষ্কার লাভ করেন। নাটকের হাস্যরস চরিত্রে সফল অভিনেতা এবং কলেজের বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগিতানুষ্ঠান সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ধারাভাষ্যকার হিসেবে তিনি সমধিক পরিচিত ছিলেন।

১১৬৮- ৬৯ এর গণ আন্দোলনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ এবং ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি বিশেষ ভুমিকা পালন করেন। স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পরে তিনি শাহজাদপুর থানা মুক্তি বাহিনীর এসিসটেন্ট কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মালিগাছা ইউনিয়ন কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার হিসাবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭২ সালে শাহজাদপুর হতে সাইফুদ্দি চৌধুরির সম্পাদনায় প্র্রকাশিত ‘‘গণ বাংলা’’ পত্রিকার উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৮ সালে আটঘরিয়া থানার কৃতি সন্তান আমিরুল ইসলাম রাঙা ও অন্যান্যদের প্রচেষ্টায় আটঘরিয়া প্রেসক্লাব গঠন করা হলে তিনি আটঘরিয়া প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি আটঘরিয়া শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে তাকে আটঘরিয়া প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য পদ প্রদান করা হয়।

তিনি দৈনিক আজাদ, দৈনিক স্ফুলিঙ্গ, দৈনিক বাংলার বাণী, দৈনিক ভোরের কাগজ এর আটঘরিয়া প্রতিনিধি এবং কলাম লেখক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। পাবনা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘‘বিবৃতি’’ (পরে দৈনিক বিবৃতি), দৈনিক ‘‘ নির্ভর” পত্রিকার নিয়মিত কলাম লেখক।

বাংলাদেশ বেতার রাজশাহী কেন্দ্রের প্রাত্যহিক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘‘ স্পন্দন’’ এ তার একাধিক কথিকা প্রচারিত হয়েছে। ২০০১ সালের ৪ জুন তারিখে পাবনা ৪ আসনের সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরীফ ডিলু এবং আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিক উদ্দিনের আমন্ত্রণে রাজশাহী বেতার কেন্দ্রের আঞ্চলিক পরিচালক ও সঙ্গীত শিল্পী হাসানুজ্জামান তালুকদার এবং অনুষ্ঠান সংগঠক ও রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী কামাল আহমেদ ও সুধিবৃন্দের উপস্থিতিতে রাজশাহী বেতারের ‘বিশেষ বহিরাঙ্গন অনুষ্ঠান আলোর পথে’ আটঘরিয়ার দেবোত্তরে উপহার সিনেমা হল থেকে সম্প্রচার কালে অনুষ্ঠান ঘোষকের গুরু দায়িত্বও তিনি পালন করেন।
একজন প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক হিসেবে তিনি ১৯৯৫ সালে ঐতিহ্যবাহি পাবনা প্রেসক্লাবের সদস্য পদ লাভ করেন। তিনি তথায় একাধিকবার কার্যনিবাহী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং দায়িত্ব পালন করেন।

বর্তমানে তিনি দৈনিক চাঁদনী বাজার এর পাবনা ব্যুরো প্রতিনিধি ও কলাম লেখক। এছাড়া দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক করতোয়া, দৈনিক আজকালের খবর, দৈনিক যুগের কথা পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। পাবনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ইছামতি, দৈনিক সিনসা, দৈনিক নতুন বিশ্ব বার্তা, দৈনিক পাবনার খবর, দৈনিক জোড় বাংলা, দৈনিক পাবনার আলো, দৈনিক বিপ্লবী সময়, দৈনিক পাবনার বাণী, দৈনিক পাবনা প্রতিদিন, চাটমোহর থেকে প্রকাশিত দৈনিক চলনবিল, ঈশ্বরদী থেকে প্রকাশিত দৈনিক স্বত:কন্ঠ, দৈনিক উন্নয়নের কথা পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখে থাকেন।

অনলাইন পত্রিকা ‘ নিউজ পাবনা ডট কম, ‘অনাবিল ডট নেট’ ও ‘প্রথম পাবনা ডট কম’ এ তার লেখা নিয়মিতভাবে প্রচারিত হয়ে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারি যুদ্ধাপরাধীদের কথা’ তার শ্রেষ্ঠ সিরিজ প্রতিবেদন যা ১শ ৮১ পর্বে শেষ করেন যা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।।‘ ছিয়ানব্বুইয়ের গণ আন্দোলন ’ সিরিজ প্রতিবেদনও উল্লেখযোগ্য। ২০২০ সালে বৈশ্বিক করোনাভাইরাসের সময় ‘করোনাকালের জীবন ধারা’ শীর্ষক ধারাবাহিক প্রতিবেদন রচনা করেন যা ৭২ পর্বে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

তিনি পাবনা বনমালী শিল্পকলার আজীবন সদস্য। পাবনা অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির আজীবন সদস্য। পাবনা পরিবার পরিকল্পনা সমিতির (এফ পি এ বি ) আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ ভুমি অফিসার্স কল্যাণ সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ও রাজশাহী বিভাগের সাবেক মহাসচিব ছিলেন এবং পাবনা জেলা শাখার সাবেক সভাপতি ও আজীবন সদস্য। পাবনা সদরের দোগাছি জাগরণী সংঘের প্রতিষ্ঠাকালে কার্যনিবাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। টেবুনিয়া লোকালয় সাংস্কৃতিক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, টেবুনিয়া শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক পরিষদের কার্যনির্বাহী সদস্য। তিনি টেবুনিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির উপদেষ্টা ও গঠনতন্ত্র প্রণেতা। আটঘরিয়া থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক দেশ বিবরণ’ পত্রিকার উপদেষ্টা। অনলাইন পত্রিকা নিউজ পাবনা ডট কম এর উপদেষ্টা সম্পাদক। পাবনা থিয়েটার ‘৭৭’ এর প্রতিষ্ঠাকালিন সদস্য এবং বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারি কল্যাণ সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি।

১৯৮৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে পাবনা সদরের টেবুনিয়া হাজেরা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই প্রতিষ্ঠানের তিনি দাতা সদস্য এবং ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত শামসুল হুদা কলেজের (বর্তমানে ডিগ্রি অনার্স কলেজ) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।

তার লেখা নাটক ‘‘ রক্ত নদীর জোয়ার,‘‘ কালো মেঘের আড়ালে’’ জবাব দাও’, মহারাজের পলায়ন’, ও স্রোতের শ্যাওলা ও নাটিকা ‘পেটুক’ একাধিকবার মঞ্চস্থ হয়েছে। তার লেখা মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বই স্বাধীনতা সংগ্রামে পাবনা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে।

সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় তাকে জাতীয় সাহিত্য পরিষদ পাবনা জেলা শাখা কর্তৃক একুশের সাহিত্য পদক ও সন্মাননা ২০১০ এবং মির্জা শসশের আলী স্মরণ পরিষদ কর্তৃক মির্জা শমশের আলী স্মরণ পরিষদ পদক -২০১২ প্রদান করা হয়। তাকে সিনসা সাহিত্য পদকও সন্মাননা প্রদান করা হয়।

তিনি মালিগাছা ইউনিয়ন মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি আটঘরিয়া ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাকালিন সদস্য। তিনি ছিলেন পাবনা সদরের বাঙ্গাবাড়িয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার সেক্রেটারি। বর্তমানে তিনি নকশবন্দি মোজাদ্দেদীয় তরিকার পাবনা জেলা আমীর। আটঘরিয়ার বেরুয়ানে অবস্থিত মুজাদ্দেদীয়া মানব কল্যাণ সমিতির (মু মা ক) তিনি অন্যতম সদস্য।

রাণীগ্রাম দারুল উলুম মাদরাসার সিনিয়র সহ-সভাপতি, রাণীগ্রাম হজরত ফাতেমাতুজ জোহরা (রা.) জামে মসজিদের সাবেক সভাপতি। টেবুনিয়া কে জে এ কেজি স্কুলের সহ-সভাপতি এবং আটঘরিয়ার দেবোত্তর এম এস নুরানী কিন্ডার গার্টেনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। পাবনা সদরের মালিগাছা কলম বাগনের সন্নিকটে অবস্থিত মোজাদ্দেদীয়া জামে মসজিদের তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। টেবুনিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের কার্যনির্বাহী পরিষদের সাবেক সদস্য। টেবুনিয়া কেন্দ্রীয় গোরস্থান কমিটির সহ-সভাপতি ও টেবুনিয়া কেন্দ্রীয় ঈদগাহ কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বিশাল কর্মময় জীবনের অধিকারি সাংবাদিক ও কলামিস্ট এবাদত আলী তিন পুত্র সন্তানের জনক। প্রথম ও ছোট সন্তান সরকারি চাকুরে। মেজ ছেলে ‘অনলাইন পত্রিকা নিউজ পাবনা ডট কম এর প্রকাশক ও সম্পাদক। এবাদত আলী পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদায় জেলা কানুনগো পদে কর্মরত থাকাকালীন ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি পাবনা সদর উপজেলার টেবুনিয়াতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।